জাকসু : সরে দাঁড়ালেন নির্বাচন কমিশনার মাফরুহী সাত্তার

নির্বাচন বাতিলের দাবি বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের

| শনিবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদজাকসু ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে সাংবাদিকদের ডেকে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। পাঁচটি প্যানেল ও বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের মধ্যে মোট চারজন শিক্ষক নির্বাচনি কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোটের দিন নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। তারা হলেন, গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম ও অধ্যাপক শামিমা সুলতানা। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকাল থেকেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নানা অসংগতি ও অনিয়মের কথা বলছিলেন। কিন্তু ভোট কারচুপির সরাসরি অভিযোগ কারও ছিল না। তারা কেন্দ্রে ভোটের চেয়ে ব্যালট বেশি যাওয়া, প্রতিপক্ষের আচরণবিধি ভঙ্গ করা, জামায়াত সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করা, পোলিং এজেন্টের অনুমতি থাকলেও তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া, ডোপটেস্টের ফলাফল না আসা, নির্বাচনকে ‘ম্যানিপুলেট’ করার নানা অভিযোগ আসছিল। এর মধ্যে একে একে পাঁচটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো ঘোষণা দেন। একটি প্যানেল থেকে অনিয়মঅব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলা হলেও তারা নির্বাচন বর্জন না করার পক্ষে অবস্থান দেন। ভোট গ্রহণের পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়নি। দ্রুত ফল ঘোষণার দাবিতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে জাকসুর সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন কিছু শিক্ষার্থী। তার মধ্যেই অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন। খবর বিডিনিউজের।

পদত্যাগের কারণ বলতে গিয়ে অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, নির্বাচনে অনেকগুলো মারাত্মক ত্রুটি তিনি দেখেছেন। সেইসব ত্রুটি সংশোধনে তিনি নির্বাচন কমিশনকে যেসব পরামর্শ বা মতামত দিয়েছেন সেগুলোকে রাখা হয়নি। তাকে বৃহস্পতিবার থেকেই চাপ দেওয়া হচ্ছে তিনি যেন নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ না করে সব কিছু মেনে নেন। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক ছিল না এবং সেখানে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না বলেও জানান তিনি।

মাফরুহী সাত্তার বলেন, শিক্ষার্থীসহ সারাদেশ যে সুষ্ঠু স্বচ্ছ জাকসু চেয়েছিল আমরা সেদিকে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সেটাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি নির্বাচনে অনেকগুলো মারাত্মক ত্রুটি দেখেছি। যেগুলো আসলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে আমি, নির্বাচন কমিশনের সকলে এই বিষয়ে একমত হলেও বিশেষ কিছু কারণে তারা আমার যে মতামত সেটাকে গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। সে কারণে আমি যখন আসরের নামাজ পড়ে এসে দেখেছি আমার মতামত সুরাহা না করেই গণনা শুরু হয়ে গেছে তখন আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আমার দ্বিমত লিখিতভাবে জানিয়েছি।

নির্বাচন বাতিলের দাবি : এদিকে জাকসু নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে ফের নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। তাদের অভিযোগ, ‘মিথ্যা আর অপপ্রচার করে’ ভোট শুরুর আগেই ছাত্রদলকে কোনঠাসা করে ফেলা হয়েছে। সেজন্য তারা নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন সদস্যকে দায়ী করছেন, যারা ‘বিশেষ রাজনৈতিক মতাবলম্বী’। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, এই বিশেষ রাজনৈতিক দল যদিও মুখে মুখে সব সময় সৃষ্টিকর্তার নাম নেয়, কিন্তু একটি নির্বাচনে বিজয়ের জন্য এরা মিথ্যাচারের মত পাপে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত হয়নি।

বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা বলছেন, আমরা মনে করি নির্বাচনের আগের রাতে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো ও নির্বাচনের দিন বিভিন্ন অনিয়ম একই সূত্রে গাঁথা। আমরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার জন্য আয়োজিত এই প্রহসনের নির্বাচনের তীব্র নিন্দা জানাই ও অভিযোগগুলো সুষ্ঠু সুরাহার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জোর দাবি জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরের জেটি এলাকায় কন্টেনার ভেঙে চুরির সময় ধরা
পরবর্তী নিবন্ধলন্ডনে মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা