জাইমা নূর মুসলিম পর্দানশীন নারীদের এক ব্যতিক্রমী আইডল

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ১৫ জুলাই, ২০২২ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

জাইমা নূর-প্রতিভাবান শিশু শিল্পী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া। ইসলামী সংগীত শিল্পী হিসেবে তার হাতেখড়ি-পঞ্চম শ্রেণীর এই শিশু শিল্পী ইতোমধ্যে ‘বাবা মানে হাজার বিকেল বেলা’ গানের মাধ্যমে সারা দেশে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ওপেন স্টেজে যখন সে পারফরমেন্স করে তখন অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে দর্শকবৃন্দ। এই শিশু শিল্পীর কন্ঠে যেন অসাধারণ সুরের মূর্চ্ছনা। তার কন্ঠের মাঝে যেন এক অভাবনীয় আবেগের শিহরণ বয়ে যায়। এই গানটি গাওয়ার সময় উপস্থিত এমন কোন বাবা নেই যে চোখের পানি ফেলেনি। এ যেন চোখের জল নয়, এ যেন সাধারণ অশ্রুধারা নয়- এ যেন আটলান্টিকের উচ্ছ্বাসময় প্রবাহমান অশ্রুধারা। আরো অনেক ব্যতিক্রমী গান গেয়ে জাইমা শিশু শিল্পীদের মধ্যে খ্যাতির শীর্ষে আসতে সক্ষম হয়েছে। জাইমার জন্য এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত রহমত। জাইমা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক আবেগভরা ভালোবাসা নিয়ে- সে আর কখনো স্টেজে পারফরমেন্স করবে না। এমনকি আড়ালেও না। সে চলে যাবে পর্দার অন্তরালে, এটি তার পারিবারিক সিদ্ধান্তও বটে। সে আল্লাহ প্রদত্ত ফরজ বিধান পর্দা অনুশীলন করতে গিয়ে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খ্যাতি ও অর্থ-বৈভবের পেছনে না ঘুরে সে সর্বোচ্চ আসনের মর্যাদা দিয়েছে আল্লাহর বিধানকে-কারণ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজ রোজার মতোই ফরজ বিধান-যেটাকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। জাইমা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আল্লাহর বিধানের কাছে পার্থিব সব জৌলুস যেন ক্ষণিকের মোহ মাত্র। সে মহিমান্বিত করেছে পর্দা নামক ফরজ বিধানকে। সম্মানিত করেছে এই কঠিন সিদ্ধান্তকে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশ পর্দাহীনতার ভয়াল থাবায় নিপতিত হচ্ছে। বেপর্দা নারীদের অবাধ চলাফেরায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠছে যেন এই জমিনের সবুজ ঘাস। এই জমিন তো একজনের-ই, সে তো আমার মহাপরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালা। তাঁর জমিনে এই অবাধ ও অশ্লীল বিচরণ, পর্দাহীনতা কোনদিন সইবার নয়। সেজন্যই তো মাঝে মাঝে ফুলে ফেঁপে উঠে আল্লাহর এই জমিন-ফলে ঘটে যায় মহাবিপত্তি। ভূমিকম্পের ভয়ংকর কম্পনে প্রকম্পিত হয়ে উঠে এই জমিন। হাজারো মানুষের মৃত্যু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এ জমিন বেহায়াপনার ক্ষেত্র নয়, এ জমিন আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র। সেজন্যই তো এই সোনার দেশে ভয়াবহ বন্যায় কবলিত হয় বার বার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখো ঘরবাড়ি, বিধ্বস্ত হয় সমূহ জনপদ। প্রাণহানি ঘটে হাজারো মানবতার। সয়লাব হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার ধন-সম্পদ। আবার ভয়ংকর অগ্নিকান্ডের কবলে পড়ে পুড়ে যায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা। সবগুলো যেন একই সূত্রে গাঁথা। এসব কিছু মহাপ্রতাপশালী আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা তাঁর সৃষ্টির জন্যে। যে সৃষ্টিকে তিনি পরম মমতায় সৃষ্টি করেছেন, ‘অবশ্যই আমি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে পয়দা করেছি, তারপর (অকৃতজ্ঞতার কারণে) আমি তাকে সর্বনিম্নস্তরে নিক্ষেপ করবো’- সূরা আত্‌ তীন-৪,৫। জাইমা নূর- এত অল্প বয়সে যে মেয়েটির মনের ভেতর খোদাভীতি জন্মেছে-তাকওয়া সৃষ্টি হয়েছে, তা কিন্তু খাটো করে দেখার বিষয় নয়। সে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বেপর্দা নারীদের দিকে যে আমিও পারি তোমরা কেন পার না? জাইমা মুসলিম পর্দানশীন নারীদের এক নির্ভরতার আইকন, ব্যতিক্রমী আইডল, অহংকার। তার এত দিনের অর্জিত সমস্ত সুখ্যাতি ও সম্মানকে পদদলিত করে চলে গেছে পর্দার অন্তরালে-জাইমা আর কোনদিন স্টেজে আসবে না, গান গাইবে না, এমনকি অন্তরাল থেকেও না কারণ নারীদের কন্ঠ আল্লাহর বিধান পর্দার অন্তর্ভুক্ত। সে বেছে নিয়েছে আখিরাতের কঠিন বাস্তবতাকে, দুনিয়ার মোহকে নয়। দুনিয়ার এই ভঙ্গুর জীবনটাকে সে নিমিষেই মাড়িয়ে দিয়ে অভিযাত্রী হয়েছে অন্য জীবনের। আজ শপিংমল, মার্কেট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যাংক-পাড়া সহ সবখানে যেন অশ্লীলতার ভয়ালমাত্রার ছড়াছড়ি। আল্লাহর ফরজ বিধান পর্দাকে উপেক্ষা করে বেপর্দা নারীদের আনাগোনা যেন এই জমিনকে বিষিয়ে তুলছে। একজন জাইমা নূর পর্দাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বিসর্জন দিয়েছে তার সমস্ত অর্জন। আমরা হেরে গিয়েছি ছোট্ট জাইমার কাছে। এর পরেও যদি বেপর্দা নারীদের শিক্ষা না হয়, তাহলে যুগ যুগ ধরে জ্বলতে হবে জাহান্নামের দেদীপ্যমান আগুনে। কারণ শেষ নবী, আমাদের প্রাণপ্রিয় মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মে’রাজের রাতে অধিকাংশ নারীকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে দেখেছেন। তিনি বলেন, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীই নারী। এর একটি মাত্রই কারণ; নারীদের পর্দার ব্যাপারে অসম্ভব অনীহা, অশ্লীলতার ভয়াল গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো। অপসংস্কৃতির ভয়াল থাবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার উপাদান এসব অনুসঙ্গ চিরস্থায়ী জাহান্নামে যাওয়ার একমাত্র কারণ। আর আমার আল্লাহতায়ালা তো ১৪০০ বছর আগেই নাযিল করেছেন সেই কঠিন আয়াতটি, ‘পুরুষরা হচ্ছে নারীদের (কাজকর্মের) ওপর প্রহরী, যেহেতু আল্লাহ তায়ালা এদের একজনকে আরেকজনের ওপর (কিছু বিশেষ) মর্যাদা প্রদান করেছেন, কেননা (প্রধানত) তারাই (দাম্পত্য জীবনের জন্যে) নিজেদের অর্থ সম্পদ ব্যয় করে; অতএব সতী-সাধ্বী নারীরা হবে (একান্ত) অনুগত, (পুরুষদের) অনুপস্থিতিতে তারা (স্বয়ং) আল্লাহর তত্ত্বাবধানে (থেকে) নিজেদের (ইয্‌যত-আবরু ও অদেখা অন্য সব কিছুর) রক্ষণাবেক্ষণ করবে’- সূরা আন নেসা-৩৪।
লেখক: সভাপতি-রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধশংকায় ও আতঙ্কে আছি
পরবর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা