জলবায়ু অভিবাসীর হুমকিতে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ

বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন

| মঙ্গলবার , ১ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

জলবায়ু বিপর্যয়ে মানুষের মৃত্যু কমাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জন থাকলেও দেশটি ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে; যার মধ্যে কিছু এলাকা অধিকতর বিপদের মধ্যে রয়েছে। এমনকি ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি জিডিপির এক তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে। ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে জলবায়ু অভিবাসী হতে পারে। আর বড় বন্যা হলে দেশের জিডিপি ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
গতকাল প্রকাশিত বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ‘কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে অধিকতর অভিযোজন এবং অভিঘাত-সহিষ্ণু পদক্ষেপসহ জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল ঢাকায় গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইসার বলেন, অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। গত ৫০ বছরে দেশটি ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ভাগ কমিয়েছে, অন্যান্য দেশ যা থেকে শিখতে পারে। কিন্তু জলবায়ু ঝুঁকি বাড়তে থাকায় অভিযোজন প্রচেষ্টা জোরদার করা অত্যাশ্যক এবং নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন গতিপথ বাংলাদেশের অভিঘাত-সহিষ্ণু ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ ও ভুটানের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ডানডান চেন, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক, বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান বক্তব্য রাখেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কিছু এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের অধিকতর ঝুঁকিতে রয়েছে। বরেন্দ্র এলাকা, উপকূলীয় এলাকা, হাওর অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল এবং যেসব এলাকায় দরিদ্রহার বেশি সেখানে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ উন্নত কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং জ্বালানি ও পরিবহন দক্ষতার ওপর জোর দিয়ে কার্যক্রম হাতে নিলে, বায়ু, মাটি এবং পানির গুণগত মান বাড়ানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনে দরিদ্র এবং ঝুঁকিতে থাকা মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গড়ে প্রতি বছরে বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক গ্রিন হাউস গ্যাস (জিএইচজি) নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান নগন্য এবং মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। তবে বিপুল জনসংখ্যা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশটির উন্নয়ন পথ পরিক্রম যদি গতানুগতিকভাবে চলতে থাকে তাহলে জিএইচজি নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
অপরদিকে বাংলাদেশ উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের মুখেও রয়েছে, যার ফলে বছরে ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশ। বিভিন্ন খাতে উন্নত বায়ুমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা বাড়াবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের জলবায়ুবান্ধব প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রতিবেদনে তিনটি অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা হয়েছে।
জনবান্ধব ও জলবায়ুবান্ধব উন্নয়ন : একটি উন্নয়ন কৌশল নিতে হবে, যা জলবায়ু প্রভাবের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভিন্নতাকে বিবেচনায় রেখে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজনে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং ক্ষুদ্র পর্যায়ের সমাধানকে গুরুত্ব দেবে। পরিকল্পনায় সরকারি পরিষেবা, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান ও সাশ্রয়ী আবাসন, অভিঘাত সহনশীল পরিবহন সংযোগ, পানি ও পানি ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
কার্বন নিঃসরণ কমানো : তুলনামূলক কম খরচে জ্বালানি, পরিবহন, শিল্প ও কৃষি থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব। এর মাধ্যমে বায়ু দূষণ, স্বাস্থ্য ব্যয় এবং কর্মসংস্থানে সুবিধা পাওয়া যাবে। বায়ু দূষণ এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে বায়ু দূষণে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। এর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।
প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্বিন্যাস : আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যমান নীতি ও কার্যক্রমের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে পারে। আর্থিক খাতের ঝুঁকি মোকাবেলাসহ এ খাতের সবুজায়নের জন্য নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ুবান্ধব কৃষি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বেসরকারি স্থানীয় ও বিদেশি খাতের সম্পৃক্ততা বাড়ানো জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনসমুদ্র দেখাতে চট্টগ্রামে ফখরুলকে দাওয়াত কাদেরের
পরবর্তী নিবন্ধএডওয়ার্ড কেনেডিকে মরণোত্তর ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান