জর্জ হ্যারিসন : বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু

| সোমবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

জর্জ হ্যারিসন। বিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন জনপ্রিয় গায়ক এবং গিটারিস্ট। তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের একজন সহযোদ্ধা। পপ সঙ্গীতের জনপ্রিয় এই শিল্পী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ১৯৭১ সালের ১ আগস্টে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেছিলেন। এই কনসার্ট হতে সংগৃহীত অর্থ বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের জন্য দেয়া হয়েছিল।
জর্জ হ্যারিসনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি ছিলেন গায়ক ও গিটার বাদক এবং বিশ্বের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল বিটল্‌সের সদস্য। গীতিকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। ১৯৬০ এর মাঝামাঝি সময় থেকে হ্যারিসন ভারতীয় সংস্কৃতি প্রতি আকৃষ্ট হন এবং বিটলসের অন্যান্য সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৬৬ সালে হ্যারিসন মুম্বাই সফরে যান। সেখানে তিনি বেশ কিছু ধর্মগুরুর সাথে দেখা করেন, সিতার নিয়ে পড়াশুনা করেন এবং কিছু তীর্থ স্থান পরিদর্শন করেন। ১৯৬৮ সালে উত্তরভারতের হৃষীকেশ পরিদর্শনে যান বিটলসের অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে এবং সেখানে মহর্ষি মহেশ যোগীর কাছে শিক্ষা নেন। ১৯৬০ সালে হ্যারিসন নিরামিষাশী হয়ে যান এবং পরমহংস যোগানন্দের কাছে ক্রিয়া যোগের দীক্ষা নেন। ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি সময় লন্ডনের রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ‘হরেকৃষ্ণ’ মন্ত্র জপ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের খ্যাতিমান সেতার বাদক পণ্ডিত রবিশঙ্করের আহ্‌বানে জর্জ হ্যারিসন নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন প্রাঙ্গণে এক অবিস্মরণীয় কনসার্টের আয়োজন করেন। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলা এবং শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান। রবি শঙ্করের সেতারের মূর্ছনা, হ্যারিসনের কণ্ঠে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্‌বানের পাশাপাশি অবিস্মরণীয় এই কনসার্টে আরো অংশ নিয়েছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেল, ওস্তাদ আলী আকবর ও ওস্তাদ আল্লা রাখা। এই কনসার্টে কাজ করতে গিয়েই বাংলাদেশের সাথে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল হ্যারিসনের। সেই থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল তাঁর অটুট বন্ধন। তাঁর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে : ‘মাই সুইট লর্ড’, ‘গিভ মি পিস অন আর্থ’, ‘অল দোজ ইয়ার্স এগো’, ‘গট মাই মাইন্ড সেট অন ইউ’, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। ২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধু জর্জ হ্যারিসন মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপুরনো বোর্ড বই কেন ফেরত দিতে হবে?