জরিমানার পরেও থেমে নেই সাগরপাড়ে বর্জ্য নিকাশ!

সিইপিজেড সেন্ট্রাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৫ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

জরিমানার পরেও থেকে নেই সাগরপাড়ে চট্টগ্রাম ইপিজেডের সেন্ট্রাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টের বর্জ্য নিকাশ। নতুন তৈরি হওয়া আউটার রিং রোডের নীচ দিয়ে নালার মাধ্যমে এসব বর্জ্য সরাসরি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। এতে করে সাগরে জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে এবং পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে বলে আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা। পুনরায় স্যাম্পল (নমুনা) সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর মান মাত্রার ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
জানা যায়, নিজেদের বর্জ্য শোধনাগার বন্ধ রেখে তরল বর্জ্য বাইরে ফেলার অপরাধে চট্টগ্রাম ইপিজেডের সেন্ট্রাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট কোম্পানিকে ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে এক শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করার পাশাপাশি ১ মাসের মধ্যে পরিশোধিত তরল বর্জ্যের গুণগতমাণ বিশ্লেষণী ফলাফল পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও অপরিশোধিত তরল বর্জ্য বাইরে ফেলছে প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে আউটার রিং রোডের প্লান্টটির সংযোগস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কালো তরল বর্জ্য স্রোতের মতো নালাতে পড়ছে। নালার মুখে তরল বর্জ্যের ফেনা তৈরি করছে। দুর্গন্ধে সন্নিকটের রাস্তাটি দিয়ে হাঁটাচলা দায় হয়ে পড়েছে। সন্নিকটের আকমল আলী রোডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইপিজেডের সবগুলো কারখানার জন্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার রয়েছে। শুনেছি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শোধনাগারটি পরিচালনা করেন। তারা বর্জ্য শোধন না করে তরল বর্জ্য নালার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে নিকাশ করে দিয়ে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়মিত বিল নেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিইপিজেড এর মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি পিপিপিতে (পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ) পরিচালনার জন্য চিটাগাং ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্লান্ট পরিচালনার জন্য তারা আমাদের কাছ থেকে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিল নিয়ে থাকে। ট্রিটম্যান্ট প্লান্টটি চালানোর কোন অনিয়ম হলে তরল বর্জ্য বাইরে ফেললে আমরাও তাদের জরিমানা করি। আবার কয়েকদিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তরও তাদের জরিমানা করেছিল। এখন তারা নতুন করে অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলছে কিনা সেটা আমি জানি না।’ এ কর্মকর্তা প্রতিবেদককে প্লান্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিটাগাং ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট কোম্পানির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ওখানে মান মাত্রায় বর্জ্য পরিশোধন করেই তরল বাইরে ফেলা হয়। ওখানে আমাদের কেমিক্যাল পরীক্ষাগার রয়েছে। নিয়মিত স্যাম্পল সংগ্রহ করে মানমাত্রা পরীক্ষা করা হয়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, বঙ্গোপসাগর অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা শুধু নয়, আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষার একটি গুরত্বপূর্ণ জায়গা। বঙ্গোপসাগরে যদি বিষাক্ত বর্জ্য যদি ফেলা হয়, তাহলে সমুদ্রের জলজপ্রাণীকূল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সমুদ্রের ফুড চেইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাগরের জীববৈচিত্র্যের শৃংখল নষ্ট হবে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে।’ তিনি বলেন, এ ধরণের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত যারা করেন, তাদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয়, তাদের লাইসেন্সও বাতিল করতে পারে। যেহেতু আগেও জরিমানা করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। জরিমানার পরেও যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের শোধরিয়ে নেননি, সেহেতু তাদেরকে যথাযথ আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক নূরুল্লাহ নূরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে সিইপিজেডের ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টকে জরিমানা করেছি। এখন যদি তারা পুনরায় তরল বর্জ্য বাইরে ফেলে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের (পরিবেশ অধিদপ্তর) গবেষণাগারের মাধ্যমে আবারো স্যাম্পল নেওয়া হবে। এতে মানমাত্রা ব্যতিরেখে বর্জ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বেড়েছে শনাক্তের হার
পরবর্তী নিবন্ধ২৮০ টাকার বেডশিট কেনা হলো ৭০০ টাকায়