কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আবারও জমে উঠেছে। সোনালী বিকেলে হৈ হুল্লোড়ে মেতেছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা। শুধু তাদের কথাইবা বলছি কেন, কোন কোন রেস্টুরেন্টে বসে প্রেয়সীর হাতের উপরে বিশ্বস্ততার হাত, একটু গা ঘেঁষে বসা- উফ্ কতদিন পর! অনলাইনে চ্যাট করে কি আর মন ভরে? তবু এতদিন তাতেই থেমে থাকতে হয়েছে। এ যুগের অমল, নিখিলেশ, মইদুল, সুজাতারা তাই মজেছে এখন সেলফিবাজিতে। বন্ধুত্ব যে কখনো হয় না পুরনো, তারই জীবন্ত ছবি ধরা পড়ছে নগর জুড়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে, কফিশপে।
কিছু মুহূর্ত আমাদের সামনে হাজির হয়ে যায়, যেখানে বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম। যার কাছে মনের সব লুকানো কথা আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে খুলে বলা যায়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে টেনে তোলা হয় বিপদসীমা থেকে নিরাপদ স্থানে। ভুল সিদ্ধান্তের অন্ধকার হতে ফিরিয়ে আলোকিত পথের সন্ধান দেখায়। বন্ধু হতে পারে যে কেউ। বন্ধুত্বের কোনো বয়স নেই। দীর্ঘ ১৭ মাস সেই বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা হয় না। মাঝে মধ্যে দেখা হলেও তাতে মন ভরে না। তাই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে দেখে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে দারুণ খুশি বিপ্লব উদ্যানে আড্ডা দেওয়া রবিন, মিশুক, আলিফ, কনা ও শ্রাবণ্য। রবিনের ইচ্ছে ধূমায়িত কফিতে চুমুক দেওয়া অবস্থায় আলিফের সাথে একটা ছবি তুলবে। তাতে বাধ সাধলো কনা ও শ্রাবণ্য। ছবি যদি তুলতে হয় একসাথেই তুলতে হবে। মিশুক কিছু বলছে না দেখে কনা আলতো হাতে চড় মারলো তার গালে। তেমন লাগেনি, কিন্তু ব্যথায় এমনভাবে কুঁকড়ে উঠলো যেন বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। কনা নির্বিকার। পরে জানা গেল, মিশুকের এ অভ্যাসটা জানে সকলে। শুধু কলেজ পড়ুয়া এ পাঁচজনই নয়, আড্ডারত এমন জটলা দেখা গেছে বিপ্লব উদ্যানের সর্বত্র। যান্ত্রিক নাগরিক জীবনে মানুষের একাকিত্ব বাড়ছে। তার উপর দীর্ঘ ১৭ মাসের অস্বাভাবিক একটি সময় কেটেছে আমাদের জীবনে। কোথাও যাওয়ার জো ছিল না। চেনাজানা বন্ধুদের সাথে দেখা বা আড্ডা সে তো স্বপ্ন ছিল! নতুন করে কারো সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা অসম্ভব, পুরনো বন্ধুদেরই দেখা পাওয়া যেত না। করোনাকালীন সময়ের কথা বলতে গিয়ে শ্রাবণ্য বলেন, ক্লাসের ফাঁকে একটু সময় পেলেই বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেওয়া একটি নিয়মিত ঘটনা। কখনো কফিশপে কখনো বিপ্লব উদ্যান বা সিআরবিতে; গাছের নিচে বসে বন্ধুরা সবাই আড্ডা দিতাম। কিছু বন্ধু ছিল যারা আড্ডাটা সবসময় মাতিয়ে রাখত। মাঝে মাঝে একটি করে কৌতুক বলে সবাইকে প্রাণ খুলে হাসার সুযোগ করে দিত। সেই মুডটা আবার ফিরে পেয়েছি বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ায়।
মহামারী করোনার কারণে দেবের সাথে অনেক দিন দেখা হয় না মৌমিতার। মাঝে মধ্যে অনলাইনে চ্যাট করে ঠিকই কিন্তু তাতে কি মন ভরে! প্রাণের মানুষ প্রাণে আছে ঠিকই, কিন্তু একটু চোখের দেখায় রোদেলা প্রেমের যে উল্লাস, তা কি আর অদেখায় পাওয়া যায়? তাই গত দুদিন ধরে দুজন দুজনার হয়ে সময় কাটান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা ছুতোয়। মৌমিতার অকপট স্বীকারোক্তি, বাসায় ঝুরি ঝুরি মিথ্যে বলতে হচ্ছে। তাতে এতটুকু আফসোস নেই। কেননা মিথ্যে বলছে সে প্রিয় মানুষটির জন্যই। দেবের অনুভূতি জানতে চাই। একটু লজ্জা পায় সে। বলে, আমার নতুন কিছু বলার নেই। লগ্নজিতার একটা গান আছে, ‘প্রেমে পড়া বারণ, কারণে অকারণ, আঙুলে আঙুল লাগলেও হাত ছোঁয়া বারণ’। আমি মনে করি ছবির প্রয়োজনে সে গানটির মাধ্যমে দুজনের মনের আকুতি ফুটিয়ে তুলেছে। গত ১৭ মাস ছিল এ বারণ। এখন এ বারণ মানে কে?