জব্দ তালিকায় নেই পর্ণো ছবি ধারণ করা সেই মুঠোফোন

অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৯ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চান্দগাঁওয়ে পর্ণোগ্রাফি মামলায় আসামি গ্রেপ্তারের পর পর্ণোধারণকারী মুঠোফোন জব্দ তালিকা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনা পুলিশের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ জানার পর তাদের হস্তক্ষেপে দ্রুত মুঠোফোনটি মামলাটির জব্দ তালিকায় দেখানো হয়। গত ৩১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানাধীন বাহির সিগন্যাল বড়ুয়া পাড়া এলাকার একটি বাসায় অনৈতিক সম্পর্ক থাকার অভিযোগে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় সাতজনের নামে পর্ণোগ্রাফি আইনে একটি মামলা হয়। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী হারাধন সর্দার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ বাড়ির মালিকের ছেলে রবিন বড়ুয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় চান্দগাঁও থানার এসআই মো. আমির হোসেনকে। জানা গেছে, ওইদিনই আলমত হিসেবে একটি সামস্যাং মোবাইল ফোন, একটি সিম কার্ড ও একটি ১৬ জিবি ধারণক্ষমতার একটি মেমোরি কার্ড জব্দ তালিকায় দেখানো হয়। এসব আলামত আসামি রবিনের কাছ থেকে পাওয়া যায় বলে তদন্ত কর্মকর্তা জব্দ তালিকায় উল্লেখ করেছেন। গত ৬ নভেম্বর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জব্দ তালিকাটি মামলার নথিতে সংযুক্ত করতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আরিফ উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে গ্রেপ্তারের পর জব্দ তালিকায় একটি মোবাইল ফোন দেখিয়েছিলেন। আরেকটি মোবাইল ফোন তিনি তালিকায় দেখাননি। যে মোবাইল ফোনটিতে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল। পরে পুলিশের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তদন্ত কর্মকর্তা মোবাইল ফোনটি থানায় জমা দেন বলে জানতে পেরেছি।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার মামলার আরেক আসামি ছোটন বড়ুয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করলে পরে আদালতে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এসময় আসামি রবিন বড়ুয়া ও ছোটন বড়ুয়ার পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন। আদালত তাদের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ দিন আদালতে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর জব্দ তালিকার আলামতে একটি মোবাইল না থাকার বিষয়টি নজরে আসে বাদীপক্ষের । পরে ডিসি (নর্থ) এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ওইদিনই চান্দগাঁও থানায় বাদীর উপস্থিতিতে তদন্ত কর্মকর্তা জব্দ তালিকা থেকে বাদ দেয়া মোবাইল ফোনটি ওসির কাছে বুঝিয়ে দেন।
এবিষয়ে চান্দগাঁও থানার আতাউর রহমান খন্দকার আজাদীকে বলেন, যে মোবাইলটি জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি তা পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে উক্ত মোবাইলটি নিয়েছি। এখন নতুন করে একটি জব্দ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এটা প্রস্তুত হলে আদালতে জমা দেয়া হবে। এ মামলা থেকে উক্ত তদন্ত কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানান ওসি। তিনি বলেন, এসআই আব্দুল কুদ্দুসকে এই মামলা তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ, বাদীপক্ষের সাথে আগের তদন্ত কর্মকর্তা আমির হোসেনের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে বলে জানান ওসি।
জানা গেছে, নতুন করে জব্দ তালিকায় তিনটি মোবাইল ফোন দেখানো হচ্ছে। এরমধ্যে দুটি হচ্ছে রবিনের কাছ থেকে পাওয়া, আরেকটি ছোটনের।
এর আগে মামলার বাদী হারাধন সরদার আজাদীকে বলেন, উনি (তদন্ত কর্মকর্তা) যখন জব্দ তালিকা তৈরি করেন তখন উনার হাতে দুইটি মোবাইল ছিল।তখন আমরা জানতাম না যে, ওখান থেকে একটি মোবাইল জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। মামলার বাদী হারাধন অভিযোগ করে বলেন, এমামলাটি দায়ের করার পর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে বিভিন্ন সময় হয়রানির পাশাপাশি মারধরও করেছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ঘটনার দিন অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে স্বামীর সামনেই ধারণ করা ওই গৃহবধুর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটির কাছে ৮০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। দাবিকৃত টাকার জন্য আসামিরা পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বাসায় আটকে রাখে। বিষয়টি পাশ্ববর্তী লোকজন জানতে পেরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল এসে রবিন বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার অন্য আসামিরা হল, রুপক বড়ুয়া(৩২), নিউটন বড়ুয়া (২৯), কিশোর বড়ুয়া (৩৫), অ্যাপোলো বড়ুয়া (৩২), সঞ্জয় বড়ুয়া (২৩) ও ছোটন বড়ুয়া (২৪)।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুটপাত ছেড়ে রাস্তাতেও হকার
পরবর্তী নিবন্ধগয়েশ্বরসহ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর আগাম জামিন