জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান শিশুর মৃত্যুহার কমায় ৩১ ভাগ

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১ আগস্ট, ২০২২ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস আজ। বিশ্বব্যাপী ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর ১ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস ও ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সাল থেকে জাতীয়ভাবে বাংলাদেশেও বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় পুষ্টিসেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উদযাপিত হয়ে আসছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা ও সচেতন করার উদ্দেশ্যেই বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়।

বিভিন্ন জরিপের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে শিশুর মৃত্যুর হার শতকরা ৩১ ভাগ কমে যায়। আর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করালে (এক ফোঁটা পানিও নয়) মৃত্যুর ঝুঁকি আরো শতকরা ১৩ ভাগ কমে যায়। তাই শিশুর মৃত্যুহার রোধে এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই মায়ের দুধ পান, পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান এবং পূর্ণ ৬ মাস বয়সের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত ঘরে তৈরি বাড়তি খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। বাজারের কোনোকিছুই মায়ের দুধের বিকল্প নয় বলে জানান চিকিৎসকরা।

তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী মাত্র ৪৩ শতাংশ নবজাতককে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করানো হয়। ৪১ শতাংশ শিশুকে পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করানো হয়। বাংলাদেশে এই হার বর্তমানে যথাক্রমে ৬৯ শতাংশ ও ৬৫ শতাংশ। শিশুকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানোর হার এখন ৮৭ ভাগ। ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শিশুর পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করানোর হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তা অর্জন করেছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দিলে মায়ের গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে, সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়, ফলে মা রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। জন্ম বিরতিতে সাহায্য করে, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁঁকি কমায়। শিশুর সর্বোচ্চ শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, ডায়রিয়ার ঝুঁকি কমায়, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং কানের প্রদাহ কমায়, দাঁত ও মাড়ি গঠনে সহায়তা করা ছাড়াও মায়ের দুধ শিশুর অনেক উপকার সাধন করে।

অন্যদিকে শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ ও ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ বেড়ে যায়। শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বেড়ে যায়। শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোটে সুন্দর পরিবেশের জন্য আগে দরকার সহমত : সিইসি
পরবর্তী নিবন্ধলঞ্চডুবি ও প্লিমসল লাইন