জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নির্দেশনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কর্মরত ইসলাম ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলকে পর্দা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আব্দুর রহিম। পুরুষদের টাখনুর ওপরে ও নারীদের হিজাবসহ টাখনুর নিচ পর্যন্ত পোশাক পরতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বুধবার (২৮ অক্টোবর) নিজের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পরিচালক এ নির্দেশ দেন। পোশাক সংক্রান্ত নির্দেশনার বিষয়টি জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জোরালো আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সচেতন নাগরিকদের তুমুল প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে গতকাল বিকেলে নির্দেশনাদাতা জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালককে শোকজ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। যদিও ভুল স্বীকার করে গতকাল রাতেই নির্দেশনাটি বাতিল করা হয়েছে মর্মে গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে। পোশাক নিয়ে নির্দেশনার সার্বিক দিক নিয়ে আজাদীর কাছে গতকাল নিজেদের প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের তিন বিশিষ্টজন।

নিজস্ব ধ্যান-ধারণা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার হীন মানসিকতা
ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম
সভাপতি, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রাম
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালক এমন নির্দেশ দিতে পারেন না। সরকারি অফিসে সরকারি নীতিমালার বাইরে ব্যক্তিগত কোনো নির্দেশনা দেয়ার সুযোগ নেই। এটি তাঁর এখতিয়ারে পড়ে না। তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণা বা মতবাদ থাকতেই পারে। তবে সেটি অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অধিকার তাঁকে কেউ দেয়নি। এটি তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণা অধীনস্ত ও অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার হীন মানসিকতা। যা তিনি করতে পারেন না। যে ব্যক্তি তাঁর এখতিয়ার কতটুকু সেটাই জানেন না; তিনি এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আসলেন কিভাবে? এটাই আমাদের কাছে বড় বিস্ময়। সরকারের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া।

এটি গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ
ড. আনোয়ারা আলম
শিক্ষাবিদ
পোশাক নিয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালকের জারি করা নির্দেশনাটি দেশের গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে আমি মনে করি। একুশ শতকে এসেও এমন নির্দেশনা জারি হবে, তাও সরকারি একটি অফিসে! এটি কোনো ভাবেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে আমরা কি দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি?
আমরা জানি না, আমরা কোনো পথে এগুচ্ছি। তবে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল একটি গোষ্ঠী সরকারি দলসহ বিভিন্ন দফতরে ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঢুকে পড়েছে। এই নির্দেশনা সেটাই প্রমাণ করে এবং এটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উত্থান বলে আমাদের ধারণা। যা সমাজ ও দেশের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। নির্দেশনাদাতাকে কেবল শোকজ করাই যথেষ্ট নয়। এর জন্য পুক্সখানুপুক্সখ ব্যাখ্যাসহ তাঁকে জবাদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

এটি বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে থাকা প্রতিক্রিয়াশীলদের বার্তা
মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান
আহ্বায়ক, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি
এই নির্দেশনার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক তাঁর প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। পরে যদিও চাপে পড়ে নির্দেশনা প্রত্যাহার করেছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যে ঘাপটি মেরে রয়েছে, এ ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। তাঁর মতো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর আরো যারা ঘাপটি মেরে আছেন, সরকারের উচিত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোট দিলেন বাইডেন
পরবর্তী নিবন্ধই-পাসপোর্ট আবেদনকারীরা সঠিক তথ্য দিয়ে বিড়ম্বনা এড়াতে পারেন