জনসংখ্যার সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে খাদ্য ও বাসস্থানের প্রকৃত চাহিদা

| শুক্রবার , ২৯ জুলাই, ২০২২ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন গত বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে গ্রামে বাস করেন ১১ কোটি ৬৩ হাজার ৫৯৭ জন ও শহরে বাস করেন ৫ কোটি ৯ হাজার ৭২ জন। চট্টগ্রামে বাস করছেন ৩ কোটি ৩২ লাখ। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসেবে দেশের জনসংখ্যা ছিলো ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিলো নারীর চেয়ে বেশি। তখন পুরুষের সংখ্যা ছিলো ৭ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ জন আর নারী ছিলো ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ জন। অর্থাৎ গত দশ বছরে দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে জনসংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি ১১ লাখ।
পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জনসংখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। মূলত মেয়েদের জীবনের আয়ুষ্কাল বেশি হওয়া এবং অভিবাসনকেই তিনি নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ মনে করেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবেই বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৪.২ বছর। আর পুরুষদের ৭১.১ বছর। আবার জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২১’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো যে, বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৫ বছর, যেখানে পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর। অর্থাৎ বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় ৩-৪ বছর বেশি। অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, দেশে নারীর সংখ্যা বেশির আরেকটি কারণ হতে পারে অভিবাসন। দেশ থেকে এক কোটিরও বেশি মানুষ বিদেশে গেছে। এর মধ্যে দৃশ্যত পুরুষের সংখ্যাই অনেক বেশি। সেটিও জনশুমারির তথ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রথম ডিজিটাল জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পরও জনমনে এই তথ্য নিয়ে আস্থার ঘাটতি আছে। বাংলাদেশের প্রকৃত জনসংখ্যা কত, তা নিয়ে সঠিক তথ্যের ঘাটতি লক্ষ করছেন বিশেষজ্ঞরা। অল্প কিছু দিন আগে জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্য ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি। পত্রিকান্তরে জনসংখ্যা নিয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ‘কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নির্ধারণের সুবিধার্থে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা’-এর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়েছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের ১ জুলাই দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৭। ২০২১ সালের ১ জুলাইয়ের পর এক বছর পার হয়েছে। এই এক বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে। জনসংখ্যাবিদেরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর ৩২ থেকে ৩৩ লাখ নতুন শিশু জন্ম নেয়। এক বছরে শিশুসহ প্রায় আট লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যার সঙ্গে প্রতিবছর ২৪ থেকে ২৫ লাখ মানুষ যুক্ত হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়ার প্রাক্কলিত জনসংখ্যার সঙ্গে এই সংখ্যা যোগ করলে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৩০ লাখ হওয়ার কথা।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। পরবর্তী সময় ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বার দেশে আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ‘পরিসংখ্যান আইন-২০১৩’ অনুযায়ী ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনার নাম পরিবর্তন করে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ করা হয়।
যে কোনো বিষয়ে তথ্যের সঠিকতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদমশুমারি বড় ভূমিকা রাখে। দেশের জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদার হিসাব করতে হয়। বর্তমান জনসংখ্যার সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পণ্যের চাহিদা যদি সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যা ধরে নিরূপণ করা হয়, তাহলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদার বাইরে থাকছে আরো অনেক মানুষ। ফলে উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত পণ্য থাকলেও বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যাবে না। জনসংখ্যার তুলনায় চাহিদায় বরং ঘাটতি থেকে যাবে। এতে চাহিদার সংকট হলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আদমশুমারির মাধ্যমে জনসংখ্যার সঠিক তথ্য নিশ্চিত হলে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রকৃত চাহিদা নিশ্চিত হওয়া সহজ। সেই চাহিদার অনুপাতে সমাধান করা সহজ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে