জনবল বৃদ্ধি পেলে রেল পারবে কাঙ্ক্ষিত পথে অগ্রসর হতে

| বুধবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ের নিয়োগে জট খুলছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে আজাদীতে। জানা গেছে, দীর্ঘদিন মামলাসহ নানা জটিলতায় নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল। এবার সেই জটিলতার অবসান ঘটেছে। খালাসি, সহকারী স্টেশন মাস্টার, পয়েন্টস ম্যানসহ বিভিন্ন পদে দেয়া হচ্ছে নিয়োগ। এছাড়া আসছে আরো বড় বড় নিয়োগ। খালাসি পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৮৬ জনকে। পয়েন্টস ম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ৭৬২ জনকে। এছাড়া সহকারী স্টেশন মাস্টার পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ৫৬০ জনকে। নিয়োগ না পেলে, জনবল বৃদ্ধি না হলে রেলের উন্নয়ন ব্যাহত হবে-তা নিঃসঙ্কোচে বলা যায়। আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, সহকারী স্টেশন মাস্টার পদে প্রথমে ২৩৫ জন নিয়োগ দেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও পরবর্তীতে ৫৬০ জন নিয়োগের সংশোধন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রেলওয়ে। সারা দেশের সব জেলার প্রার্থীরা এই নিয়োগে আবেদন করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সহকারী স্টেশন মাস্টার পদের প্রার্থীদের আবেদনের শেষ সময় ছিল নভেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ বন্ধ থাকায় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল লোকবল সংকটে হিমশিম খাচ্ছে। রেল ভবন সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ১৪ হাজার কম জনবল নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রেলওয়ে।
এখানে উল্লেখ করতে পারি, কয়েক মাস আগে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সরকারের নিকট একগুচ্ছ প্রস্তাবনা পেশ করেছে। তম্মধ্যে রয়েছে, রেলের বহুমুখী উন্নয়ন। রেলপথ রামগড় সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সুবিধার জন্য ভারতীয় স্থলবন্দরের সাথেও প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ট্রেন যোগাযোগ। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কুমিরায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে একটি নতুন রেলওয়ে স্টেশন। সিআরবির সৌন্দর্যবর্ধনেও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৩০টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৪০টি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। কেবল সড়কের উপর নির্ভর করে একটি দেশের পরিপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব নয়। এরই অংশ হিসেবে রেলওয়ের উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে রেলের উন্নয়ন হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকবল সংকট থাকার পরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করা হচ্ছে। রেল ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে সম্পূর্ণ আধুনিক করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। আমরা রেলকে একটি নিয়মতান্ত্রিক অবস্থায় আনতে এবং যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে রেলের নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে। যা দেশবাসীকে খুবই আশান্বিত করেছে, এ কথা বলতেই হয়। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্লথগতি, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতায় পড়ার খবর আমাদের স্বভাবতই হতাশ করে।
জানা গেছে, রেলওয়ের উন্নয়নে ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। চলমান এ মহাপরিকল্পনার আওতায় ৬টি ধাপে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) সংশোধিত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজার, মোংলা বন্দর, টুঙ্গীপাড়া, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই প্রয়োজনে প্রকল্পগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। জনবল বৃদ্ধি পেলে রেল তার কাঙ্ক্ষিত পথে অগ্রসর হতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আমরা চাই সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে রেল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আসুক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে