জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

নূর মোহাম্মদ চৌধুরী | মঙ্গলবার , ১৭ মে, ২০২২ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

১৭ মে ১৯৮১ সাল। ৪১ বৎসর আগে দিনটি ছিল রবিবার। কাল বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি আর বৈরী হাওয়া প্রতিরোধ কমাতে পারেনি। গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিল। সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর বন্দর থেকে অধিকার বঞ্চিত মুক্তি পাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লাখো কণ্ঠের শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত পুরো রাজধানী। এক নজ দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শেরে বাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ্য কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আজ ৪১ বৎসরে পদার্পণ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চরম এক প্রতিকূল পরিবেশ নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়, বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিদেশে থাকা কালেই ১৯৮১ সালে ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ইডেন হোটেল অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের নেতারা শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করেন।
তৎকালীন বহুধাবিভক্ত দেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যের সাফল্যগাথা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকা শেখ হাসিনার হাতে অর্পণ করে। লাখো জনতার প্রাণঢালা উষ্ণ সম্ভাষণ এবং গোটা জাতির স্নেহশীষ ও ভালোবাসার ডালা নিয়ে প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর কন্যার আগমণে সেদিন গগনবিদারী মেঘ গর্জন, বাঞ্চাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বদলা নেয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল। যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার পিতৃ হত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। ঝড় বাদল আর জনতার আনন্দশ্রুতে অবগাহন করে বাংলা নগরে লাখ লাখ মানুষের সংবর্ধনা ও হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা ভালোবাসার জবাবে পিতা, মাতা, ভাইসহ সর্বস্বজন হারানো বেদনায় কাতার বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেছিলেন, ‘আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘর সংসার করেছিলাম। সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার আর কিছুই নেই। পিতা, মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই’। শেখ হাসিনার সেদিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৪১ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কালো মেঘের ভ্রকুটিকে উপেক্ষা করে জনগণের ভাগ্য বদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক প্রধান- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ
স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূগোলের গোল
পরবর্তী নিবন্ধতৃণমূল পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে জুডো প্রশিক্ষণের উদ্বোধন