জনগণের সঞ্চয় ও অভিশপ্ত বিনিয়োগ

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

সমকালীন দেশের অর্থব্যবস্থা পরিচালনার দৃশ্যপট বিশ্লেষণে দরিদ্র-নিম্ন-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর অতি কষ্টে ব্যাংকে সঞ্চিত আমানত বিশ্বাসযোগ্য নিরাপদ নয় বলে ভোক্তাসমাজের ধারণা। জনশ্রুতিমতে শিল্পকারখানা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যক্তি বা বেসরকারি পর্যায়ে ঋণগ্রহীতার অসৎ উদ্দেশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে উন্মোচিত। নদী-সমুদ্র-জলাশয়-খাসজমি বন্ধক রেখে অবৈধ-অনৈতিক যোগসাজশের মাধ্যমে ঋণের নামে অর্থ লুন্ঠন বিনিয়োগের নতুন প্রকরণ ‘খেলাপি ঋণ’ হিসেবে বিবেচ্য। দেশবাসীর কাছে অতি সুপরিচিত হাতেগোনা স্বল্প সংখ্যক নষ্ট উদ্যোক্তাদের করায়ত্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পবিত্র আমানত এক ধরনের কৌতূহলী ক্যাসিনোরূপ পরিগ্রহ করেছে। দৃষ্টিগোচরে আসা সামান্য কিছু অবয়ব পরিলক্ষিত হলেও; খেলাপি ঋণের বিশাল অংশ অর্থ পাচারের মোড়কে বহির্দেশে এসব পাপিষ্ঠদের পর্বতসম সম্পদ পুঞ্জিভূত করছে। সচেতন মহল বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছে যে, এদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত কোন কঠিন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষ অপারগ। অধিকতর পরিতাপের বিষয় হচ্ছে; এদের বিদেশ গমনাগমন-অবস্থান এবং লুম্পেন চরিত্র উদঘাটন যেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের কাছে এক ধরনের প্রহসনে পরিণত। পুরো দেশকে জিম্মি করে ধ্বংসের তলানীতে পৌঁছিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তাদের এই কদর্য অপচেষ্টার যেন কোনো পরিসমাপ্তি নেই। ভয়ঙ্কর এসব চিহ্নিত গোষ্ঠীর কুৎসিত ব্রত সকলকে হতবাক করলেও তাদের পৃষ্ঠপোষক-সহায়তাকারী-ভাগবাটোয়ারার অংশীদারদের আনন্দ-বিনোদন-ভোগবাদির চরিত্র বরাবরই আনন্দরথে প্রতিভাত।
২৪ নভেম্বর ২০২১ গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনিং বিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ১৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি ১২ লাখ ১৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধিতে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ১৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে প্রকাশ হওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন এপ্রিল-জুন ২০২১’ এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, খেলাপি ঋণের শীর্ষে থাকা পাঁচ ব্যাংকেই আছে ৪৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা যা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক। শীর্ষ পাঁচসহ ১০ ব্যাংকে রয়েছে ৬২ হাজার ৩৯৪ কোটি এবং বাকি ৪৯ ব্যাংকে আছে ৩৬ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে; ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ যেমন কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, তেমনি সম্পদও কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। কিছু ব্যাংক বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে লাগামহীনভাবে। পক্ষান্তরে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতে সম্পদের সুষম বন্টন হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর সুষম বন্টনের ঘাটতির কারণে কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি আবার কোনো ব্যাংকের একেবারেই নেই বলে ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের ধারণা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানদণ্ডে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে ২৫টি এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ডে ৪৩টি ব্যাংক ঝুঁকিতে রয়েছে।
১৮ নভেম্বর ২০২১ প্রকাশিত উল্লেখ্য সূত্রমতে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ১০ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে যার একটি বৃহৎ অংশ প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকরা নানা জালিয়াতি করে লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নামে-বেনামে ও বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় প্রদত্ত ঋণগুলো আদায় না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ আদায়ে মামলা করতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থঋণ ও অন্য আদালতে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৩২টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্তদের মতে, খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে আছে এবং কাঙ্ক্ষিত নিষ্পত্তি না হওয়ায় আদালতে মামলার স্তুপে পরিণত হয়েছে। তাছাড়াও ঋণখেলাপি রাঘববোয়ালরা আদালতে মামলাগুলো ঝুলিয়ে রেখে বহাল তবিয়তে দেশের ব্যবসা ও রাজনীতিতে দাবড়ে বেড়াচ্ছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিপুল অঙ্কের এই টাকা আটকে থাকার জন্য মূলত দায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা। আদালতে বারবার স্টে অর্ডার বা স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে তারা বাধাগ্রস্ত করছেন। ফলে মামলাগুলো শুধু বছর নয়, যুগের পর যুগ ঝুলে থাকে। এমনকি টাকা আদায়ে ১৯৯৯ সালে করা একটি মামলার চূড়ান্ত রায় আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’ ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের পাসপোর্ট জব্দ করে বিদেশ যাওয়া বন্ধ, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের সব সুযোগ-সুবিধা বাতিলের পাশাপাশি সামাজিকভাবে বর্জন বা একঘরে করা না হলে টাকা আদায় সম্ভব হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
অতিসম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সাথে সাথে ব্যাংকগুলোর কয়েকটি শাখায় মোট ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়াকে অস্বাভাবিকও মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ সরকারি খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম একটি ব্যাংকের। জুন ’২১ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়াও প্রথম, তৃতীয় এবং চতুর্থ বৃহত্তম ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ১০ হাজার ৩৫১ কোটি, ৭ হাজার ৩০৫ কোটি এবং ৩ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপির পরিমাণ ৪৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা যা ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৯ হাজার ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ, বিদেশি ব্যাংকে ২ হাজার ৪৯২ কোটি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
২০২০ সালের প্রথম পক্ষকাল থেকে দেশে করোনা মহামারী শুরুর পর প্রায় দেড় বছরের মধ্যে অবলোপনসহ মন্দ ঋণের ডাউনপেমেন্টে পুনঃতফসিলকরণসহ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে ক্রমশ বেড়ে চলছে। ১৪ অক্টোবর ২০২১ প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৩৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা আছে খেলাপির হিসাবে আর বাকী ১৬ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিবেদন থেকে আড়াল করা হয়েছে। বিজ্ঞজনদের মতে, অনিয়ম আড়াল করার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম প্রদর্শন করার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপনের পন্থা অবলম্বন করছে। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মতে, ঋণ অবলোপন করা মানে খেলাপি ঋণকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া ও অবলোপনের নামে ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট পরিচ্ছন্ন করে কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী বিতরণকৃত ঋণের সমপরিমাণ অর্থ সঞ্চিতি রেখে ঋণ অবলোপনের বিধান থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো শতভাগ সঞ্চিতি রেখে ঋণ অবলোপন করছে। ফলে প্রতি বছরই ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে শত শত কোটি টাকার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, গ্রাহকদের আমানতের অর্থ থেকে দেওয়া ঋণ ব্যাংকগুলো বিভিন্ন কেলেঙ্কারি-অনিয়ম-জালিয়াতি ও নানা অব্যবস্থপনায় ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়ে মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রকাশিত গণমাধ্যম সূত্রে, মন্দ ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি ও বিশেষায়িত মোট ১১টি ব্যাংক বড় ধরনের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। যার মধ্যে সরকারি পাঁচটি, বিশেষায়িত দুটি এবং বেসরকারি খাতের চারটি। জুন মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্যাংকিং খাত তদারকি ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে যথাযথ-কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিপুল পরিমাণে খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চরম মূলধন সঙ্কট তৈরি করেছে। আর এই সঙ্কট কাটাতে প্রতিবছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো জনগণের করের টাকা থেকে ভুর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে জনগণের অর্থ ও আমানত নিয়েই ব্যবসা করে থাকে- এই বাস্তবতার স্বীকৃতি বাংলাদেশে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের স্বেচ্ছাচারী প্রবণতায় মনে হয়, ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের অর্থ যেন কিছু মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদ, যা তাদের খুশি মতো ব্যবহার করা যাবে।’
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সদিচ্ছার ঘাটতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব-হস্তক্ষেপের ফলে ব্যাংকিং খাতে আইনের লঙ্ঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সমগ্র ব্যাংকিং খাতে কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের পরিবারতন্ত্র বা গোষ্ঠীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব গোষ্ঠী বা পরিবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিজেদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের দখলে নিচ্ছে। খেলাপি ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ও বিদেশে পাচার হওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালনে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। খেলাপি ঋণের উর্ধ্বগতি কমাতে হলে সুশাসন বাড়িয়ে দুর্নীতি বন্ধ করে প্রতিটি ঋণ যথাযথভাবে যাচাই-বাছাইয়ে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ঋণের মান বাড়াতে হবে। ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের শাস্তির দৃশ্যমানতা এবং স্বচ্ছতাই ঋণ খেলাপি হ্রাসের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তাদের মতামতে উঠে আসে।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটিসহ (জিএফআই) বিভিন্ন সংস্থার মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হয় আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং, রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে অনুমান করা যায় যে, খেলাপি ঋণের অধিকাংশ অর্থ উল্লেখিত উপায়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জিএফআই’র সূত্রমতে, ২০২০ সালে দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। বিগত কয়েক দশক শ্রমঘন শিল্পের প্রসার এবং গুনগত মানসম্মত উৎপাদিত পণ্যের বিতরণ-বাণিজ্যিকীকরণ দেশের রাজস্বখাতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে অসাধারণ পরিতোষ সৃজনে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এরই আলোকে দেশে শিল্পঋণ বিতরণ-ব্যবহার-অতিরঞ্জিত প্রতারণা-চিহ্নিত মাফিয়া চক্রের সিন্ডিকেট কর্তৃক ঋণগ্রহণে যথেচ্ছাচার-অপকৌশলে বিদেশে অর্থপাচার দেশকে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী করছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়নে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে দেশের সকল উন্নয়ন-অর্জন অন্তঃসারশূন্যে পর্যবসিত হবে এবং ক্রমান্বয়ে দেশ দুষ্টচক্রের সৃষ্ট কঠিন সঙ্কটের অতল গহ্বরে নিপতিত হবেই- নি:সন্দেহে তা বলা যায়।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্নপূরক ব্লাড ডোনেশনের শীতবস্ত্র বিতরণ