জঙ্গি সংগঠনগুলোর জন্য মামলার রায় একটি বার্তা

‘ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে বোমা হামলা’

| শনিবার , ২০ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে বোমা হামলা মামলার রায়ে ৫ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। তারা হলেন, নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন, বলকিপার ও টাঙ্গাইলের আবদুল মান্নান, দিনাজপুরের রমজান আলী, সাতক্ষীরার মো. বাবুল রহমান ওরফে রনি ও আব্দুল মান্নানের বড় ভাই আব্দুল গাফ্‌ফার। এর মধ্যে এম সাখাওয়াত হোসেন ঘটনার পর থেকে পলাতক। বাকিরা রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। গত ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল হালিম এ রায় ঘোষণা করেন। আজাদীতে ১৮ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদে ট্রাইব্যুনালের পিপি মনোরঞ্জন দাশের বক্তব্য প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়। ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেছেন। সন্দেহাতীতভাবে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৬ (২) ও ১২ ধারায় বিচারক ৫ জনকেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে একজন ছাড়া বাকিরা কারাগারে আছেন। পলাতক ওই একজনের প্রতি রায় ঘোষণা শেষে সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ঘোষিত এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায় জঙ্গি সংগঠনগুলোর জন্য একটি বার্তা। ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর জুমার নামাজের সময় চট্টগ্রামের বানৌজা ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরের বানৌজা পতেঙ্গা মসজিদ ও বানৌজা ঈশা খাঁ মসজিদে পৃথক দুটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সামরিক বেসামরিক মিলিয়ে মোট ২৪ জন আহত হন। এর মধ্যে এম জে রহমান, রিপুনজ্জামান, এম এ রহমান, এস এ রহমান, লুৎফুর রহমান, নেহারুল, এম এ আমিন, ইব্রাহীম, এম সাইফ, ইবতিশাম জাওয়াদ ছিলেন নৌবাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। যাদেরকে ঘটনার পর পর বানৌজা পতেঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল কমান্ডার এম আবু সাঈদ সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ইপিজেড থানায় মামলাটি করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে নীরবে ঘটছে জঙ্গিবাদের বিস্তার। নাগরিকদের শঙ্কা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের ইস্যুতে গণমাধ্যমে নানাবিধ প্রতিবেদন ও কিছু কিছু সংবাদ আমরা পাচ্ছি। অবশ্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকারের কৌশলী ও নানাবিধ উদ্যোগও প্রশংসার দাবি রাখে। তা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত এই শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার ইস্যুটি সবার মাথায় প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে জঙ্গি তৎপরতা আবারও হঠাৎ করে দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সূত্রে বলা হচ্ছে, ‘নব্য জেএমবি’ নামের জঙ্গি সংগঠনটি নতুন নেতৃত্বে আবারও সংগঠিত হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পিতভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা থেকেই এগুলো হতে পারে বলে অনুমান করা যায়।
আমরা জানি, জঙ্গি দমন অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। তবু এ অবস্থায় কথিত নব্য জেএমবি বা অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর গোপন তৎপরতায় সাধারণ মানুষ শঙ্কিত না হয়ে পারে না। এই জঙ্গিরাও কীভাবে ও কিসের জোরে চলতে পারছে, তা গভীরভাবে জানার চেষ্টা করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, ‘জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন কখনোই পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তাদের জনবল সংকটও কখনো স্থায়ী হয়নি। এ দুটো বিষয়ের পেছনে কিছু বাস্তবিক প্রণোদনা আছে; উগ্র, অসহিষ্ণু ও জবরদস্তিমূলক ধর্মীয় মতাদর্শের সঙ্গে রাজনীতির যোগ এবং তার প্রতি কিছুসংখ্যক তরুণ-যুবকের তীব্র আকর্ষণ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কঠোর দমন-অভিযান, গ্রেপ্তার-বিচার-শাস্তি প্রদান ইত্যাদি অবশ্যই আরও জোরদার করতে হবে; কিন্তু শুধু এভাবেই এ গভীর সমস্যার সমাধান মিলবে না। এ জন্য ব্যাপক ও গভীর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি।’
এদিকে চট্টগ্রামের নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে বোমা হামলা মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী জালাল উদ্দিন রায় পরবর্তী সাংবাদিকদের তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘ঘটনার এক বছর পর মামলা হয়। অথচ এর আগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এ এক বছর কোথায় ছিলেন? আসামিদের কারো ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নেই। কোনো সাক্ষী এদের কারো নাম বলেন নি। আমরা এ রায়ে ক্ষুব্ধ। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করছি, সেখানে প্রতিকার পাব।’ রায়ে ক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার অধিকার আছে সবার। সেহিসেবে তারাও যেতে পারেন। তবু আমরা প্রত্যাশা করবো, বিচার-কাজ যেন সুষ্ঠু হয়। এ ধরনের হামলার শাস্তি না হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা থাকে। বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। জঙ্গি আশঙ্কার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে না পারলে এর বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে