এখন অনেকের কাছে নতুন করে প্রশ্ন জাগছে, জঙ্গি তৎপরতা কি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে? সমপ্রতি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কথিত হিজরতের নামে তরুণদের নিখোঁজ হওয়া এবং জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হওয়া, পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের তথ্য পাওয়া, পটিয়ার বাইপাসে
শারক্বীয়ার চার সদস্য গ্রেপ্তারের মতো ঘটনায় এই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। আগামী এক বছরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে–বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে বলে বিভিন্ন সময় মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর এ
অঞ্চলের জঙ্গি ও উগ্রবাদীরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে মনে করেন। দৈনিক আজাদীতে ২ মার্চ প্রকাশিত ‘পার্বত্যাঞ্চল ছেড়ে সমতলে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে আমিরের নির্দেশে পার্বত্যাঞ্চল ছেড়ে সমতলে ছড়িয়ে পড়ছে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল
হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা। পটিয়ার চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের বাইপাস থেকে মঙ্গলবার রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ‘তাত্ত্বিক জ্ঞান’ নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বম পার্টির (কেএনএফ) সঙ্গে মিলে গহিন বনে আস্তানা গেড়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও চট্টগ্রাম জোনের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত টিম এ অভিযান চালায়।
গ্রেপ্তার চার তরুণ ছয় মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পে শারক্বীয়ার
সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। শারক্বীয়ার আমীর আনিসুর রহমান মাহমুদের ঘনিষ্ঠজন কেএনএফ’র প্রধান নাথাম বম। আমীরের অনুরোধে পাহাড়ে অর্থের বিনিময়ে আশ্রয়, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি এবং অস্ত্র ও রসদ সরবরাহের কাজ করছিল কেএনএফ। বিভিন্ন সময় কেএনএফ প্রধান নাথান বম, বাংচুং
, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গেছেন। পরবর্তীতে র্যাবের অভিযানের মুখে আমীরের নির্দেশে শারক্বীয়ার সদস্যরা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের সাইজামপাড়া, মুন্নুুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষংপাড়া, তেলাং পাড়ায় আত্মগোপন করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপরাজনীতির কারণেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতো সমাজে জঙ্গিবাদের শিকড় খুব গভীরে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিকভাবে প্রধান সমস্যা। দুই দশক আগেও শুধু আল কায়দা এবং তালেবান নামে দুটি জঙ্গি সংগঠন বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিল। বর্তমানে নাইজেরিয়ায় বোকো
হারাম, সোমালিয়ায় আল–শাহাব, সিরিয়ায় আইএস, বিন লাদেন–ফ্রন্ট লাইন ও আল নুসরা এবং লিবিয়ায় আনসার আল–শরিয়ার মতো বহু জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ছোট–বড় সর্বমোট জঙ্গি সংগঠনের সংখ্যা পাঁচ হাজার।
বিশ্লেষকরা বলেন, মনে করা হয় যে, বর্তমানে জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা জঙ্গি তালিকায় নাম লেখাচ্ছে তারা একটা ভুল বিশ্বাস নিয়ে এই পথে পা বাড়াচ্ছে। তারা ধর্মের জন্য ও শোষণ–বঞ্চনা
অবসানের লক্ষ্যে কাজ করছে বলে মনে করছে। আসলে তারা বড় দেশগুলোর স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সরাসরি সৈন্য নামিয়ে যুদ্ধ ঘোষণার পরিবর্তে এখন বৃহৎ দেশগুলো জঙ্গি লেলিয়ে দিচ্ছে। তাই দেশে দেশে জঙ্গি তৎপরতা থামছে না। নানা নামে নানা কৌশল প্রয়োগ করে জঙ্গিরা তাদের অপতৎপরতা চালিয়েই যাচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক ইলাহী চৌধুরী পত্রিকান্তরে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকতে হবে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে অঙ্গীকার করতে হবে যে, এসব বিষয়ে তারা কোনও ছাড় দেবে না। এখনও
আমরা অনেকেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডকে বলছি সাজানো নাটক। সরকারেরও এ ক্ষেত্রে দায় আছে। তাদের বিভিন্ন সংস্থাগুলো এ নিয়ে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা উচিত। যেমন মাথায় হেলমেট পরানোর দরকার কী? তাদের জনসম্মুখে পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত। যাতে সবাই তাদের চিনে রাখতে পারে। এছাড়াও পরিবার, বাবা–মা, প্রতিবেশী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব রয়েছে।
তাই আমাদের মনে রাখতে হবে, জঙ্গিরা দেশ–জাতি এবং মানবতার শত্রু। এই অশুভ শক্তি যাতে কোনোক্রমে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য সবার সতর্কতা জরুরি।