ছয় পুত্র হারা বৃদ্ধা মৃণালিনী বাঁচবেন কী নিয়ে?

চকরিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নিয়তির পরীক্ষায় আবারও হেরে গেলেন ডুলহাজারার প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের বৃদ্ধা স্ত্রী মৃণালিনী। পিকআপ চাপায় একসঙ্গে পাঁচপুত্র হারানোর পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি থাকা রক্তিম শীল সুচিকিৎসা পেয়ে হয়তো ফিরে আসবেন। কিন্তু না, তার পাঁচ ছেলের পথ ধরে অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছে রক্তিমও।
ভয়াবহ একটি দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই ঘুরে গেছে একটি পরিবারের জীবনের বাঁক। অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সামনে কেমন দিন অপেক্ষা করছে সেই হিসেব কষছেন বৃদ্ধা মৃণালিনী ও সদ্য বিধবা তার ছয় পুত্রবধূ।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৃদ্ধা মৃণালিনীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। উঠানে স্বামীহারা পাঁচ পুত্রবধূ তাদের কোমলমতি পুত্র-কন্যাদের নিয়ে বসে আছেন। তারা ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছেন। অপরদিকে বাড়ির ভেতর অন্ধকার একটি কক্ষে বিছানায় পড়ে রয়েছেন ৬ পুত্র হারা শোকে কাতর মা বৃদ্ধা মৃণালিনী শীল। তাকে ডাকতেই ডুকরে কেঁদে উঠেন। বিলাপ করতে করতে বলতে থাকেন- ভগবান তুমি এত নিষ্ঠুর কেন? পাঁচ সন্তানকে তো কেড়ে নিয়েছিলে। রক্তিমকে কী বাঁচিয়ে রাখা যেত না? এখন আমি কার মুখ দেখে দুনিয়াতে বেঁচে থাকব। আমার তো আর কিছুই রইল না।
বাড়ির বারান্দায় টিনের বেড়ার সঙ্গে টাঙানো আছে সেইদিন একসঙ্গে প্রাণ হারানো পাঁচজনসহ ৬ পুত্রের (একজন তিনবছর আগে মারা যায়)। তাদের ছবির ওপরে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে গাঁদা ফুলের মালা। সেই ছবি দেখিয়ে দিয়ে বৃদ্ধা মৃণালিনী বলতে থাকেন, তাদের জন্মের পর প্রত্যেকের সুন্দর সুন্দর নাম রেখেছিলাম আমি নিজেই। আজ তারা আমার বুকে নেই। তারা এখন মাটির বুকে চলে গেছে।
পরিবার সূত্র জানায়, ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ৬ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ভাই নিরূপম শীলের কোনো সন্তান নেই। তার স্ত্রী গীতা সুশীলই আছেন মাত্র। বাকি পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে অনুপম শীলের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী পপী শীল, দুই সন্তান- ১৬ বছরের দেবশ্রী শীল ও অর্ক শীল (১১); দীপক শীলের পরিবারে স্ত্রী মুন্নী শীল পূজা ও একমাত্র সন্তান আয়ুষ্মান শীল (৬); চম্পক শীলের পরিবারে স্ত্রী দেবীকা শীল, দুই কন্যাসন্তান আয়ুশ্রী (৪) ও আদ্রিতা শীল (১৮ মাস); স্মরণ শীলের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী তৃষ্ণা শীল, দুই সন্তান অভি শীল (৫) ও একমাস বয়সী শ্রীময়ী শীল। সর্বশেষ গতকাল মারা যাওয়া রক্তিম শীলের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী সুমনা শীল ও একমাত্র পুত্রসন্তান ঋদ্ধি শীল। এছাড়াও রয়েছেন তিনবছর আগে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়া তাদের আরেক ভাই হীরক শীলের দুই স্ত্রী শিল্পী রাণী শীল ও সাকী শীল। সেই সংসারে রয়েছে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। তাদের দেখভাল করতেন চাচারা।
পিকআপচাপায় একইদিন নিহত পাঁচ ভাইয়ের স্ত্রীরা দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিবারের যাবতীয় ভরণ-পোষণের যোগান দিতেন স্বামীরা। দুই ভাই ফার্মেসি, দুই ভাই সেলুনের দোকান এবং অপর দুইভাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন। এতে দুবেলা খাবারও জুটছিল নিয়মিত। সন্তানদেরও পড়ালেখা করাচ্ছিলাম। কিন্তু আজ সন্তানদের দুবেলা খাবার দেওয়া, তাদের পড়ালেখা করানো সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে গেল। এই অবস্থায় কি রাষ্ট্র আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে না?

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবা ফেরেনি বাকরুদ্ধ ঋদ্ধি
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ ভাইয়ের পর চলে গেলেন রক্তিমও