আর মাত্র ৬ মাস বাকি। আগামী বছরের (২০২৩ সাল) জুনে চালু হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। এরই মধ্যে ১০০ কিলোমিটার রেলপথের ৬০ কিলোমিটার লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মোট কাজের ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। কক্সবাজার রুটের যাত্রীদের জন্য নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট কোচের আদলে কেনা হচ্ছে উন্নতমানের ৫৪টি কোচ। সুপ্রশস্ত এসব কোচের জানালা দিয়ে যাত্রীরা অনায়াসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন কক্সবাজার। গতকাল বৃহস্পতিবার দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। মন্ত্রী এ সময় নির্মাণাধীন আইকনিক স্টেশন বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন তলা ঘুরে দেখেন। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে স্টেশন বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। পরে তিনি রেলের বিশেষ ট্রলিতে করে প্রায় ৩০ কিলোমিটার নতুন লাইনের পরিদর্শন করেন।
এসময় রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের জানান, ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগে যুক্ত হবে কক্সবাজার। তখন সারাদেশ থেকে ট্রেন সরাসরি কক্সবাজারে যাবে। মন্ত্রী বলেন, এক সময় এটি ছিল স্বপ্নের মত, এখন সেটা বাস্তবায়নের পথে।
কক্সবাজারবাসী যেমন অপেক্ষায় রয়েছে তেমনি সারাদেশের মানুষ ট্রেনে করে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে চলাচলের জন্য ট্যুরিস্ট কোচের মতো উন্নতমানের কোচ দ্বারা ট্রেন চালানো হবে। এজন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি কোচ কেনা হবে যেগুলোর জানালা সুপ্রশস্ত। এতে মানুষ অনায়াসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবে।
কাজের অবগতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬০ কিলোমিটার রেললাইন সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী বছর জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত এ রেল যোগাযোগ চালু হলে দেশের পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট একশ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। পুরো প্রকল্পে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ২৪২টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
হাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। রেল লাইনটা নির্মিত হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। পর্যটকদের জন্য নিরাপদ আরামদায়ক, সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার নিশ্চিত করা হবে। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা সম্ভব হবে।
এসময় মন্ত্রীর সাথে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। পরে রেলের বিশেষ ট্রলিতে করে কক্সবাজার থেকে ঈদগাঁও ইসলামাবাদ পর্যন্ত রেললাইন পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।