ছোট্ট রানির নাম গিনেস বুকে উঠবে?

পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকায় গরু ঢাকায়

| মঙ্গলবার , ৬ জুলাই, ২০২১ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

বয়স হতে চললো প্রায় দুই বছর, তবে উচ্চতায় এখনও দুই ফুটের কম। সাদা রঙের এ গরুটি নাম পেয়েছে ‘রানি’। ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকায় গরু’ হিসেবে রানির নাম রেকর্ড বইয়ে তুলতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আবেদন করেছে এর মালিক আশুলিয়ার শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। গিনেস কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশের এ কৃষিভিত্তিক খামার। খবর বিডিনিউজের।
শিকড় অ্যাগ্রো জানিয়েছে, তাদের ‘রানি’ বক্সার ভুট্টি জাতের গরু। বয়স ২৩ মাস, উচ্চতা ৫০ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার (২০ ইঞ্চি), দৈর্ঘ্য ৬০ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার (২৭ ইঞ্চি) এবং ওজন ২৮ কেজি।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে এখন ‘শর্টেস্ট কাউ’ বিভাগের রেকর্ডের মালিক ভারতের কেরালা রাজ্যের ‘মানিকিয়াম’ নামের একটি গরু। মালিকের নাম অক্ষয় এনভি। ২০১৪ সালে গরুটির নাম যখন রেকর্ড বইয়ে তোলা হয়, তখন ৬ বছর বয়সী মানিকিয়ামের দৈর্ঘ্য ছিল ৬১ দশমিক ১ সেন্টিমিটার (২৪ দশমিক ০৭ ইঞ্চি), ওজন ছিল ৪৪ কেজি। শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাসান হাওলাদার জানান, গত ২ জুলাই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডসের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন তারা। ফিরতে মেইলে গিনেস কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের যাচাই প্রক্রিয়ার জন্য ৯০ দিন সময় লাগে। এর মধ্যেই তারা সিদ্ধান্ত জানাবে।
খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. আবু সুফিয়ান জানান, প্রায় ১১ মাস আগে নওগাঁর এক ব্যক্তির কাছ থেকে রানিকে কিনে আনেন তিনি। গরুটিকে দিনে দুই বেলা খাবার দিতে হয়। সাধারণ গরুর তুলনায় এটির খাবারও অনেক কম লাগে। স্থানীয় পশু চিকিৎসকের ভাষ্য অনুযায়ী, রানির দুই দাঁত হয়ে যাওয়ায় এখন আর ওর বড় হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। গরুটি প্রজননের উপযুক্তও হয়েছে। কিন্তু ছোট হওয়ায় অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা এড়াতে ডাক্তারের পরামর্শে প্রজনন প্রক্রিয়া করানো হয়নি। শিকড় এগ্রোর রানির আকার নিয়ে প্রশ্ন করলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটিনারি সায়েন্স অনুষদের ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলম বলেন, এ সাইজের গরু, বয়স, ওজন, পরিপূর্ণতা ব্যতিক্রম কিছু নয়। তবে সরাসরি দেখে এ নিয়ে আরও ভালো করে মন্তব্য করা যেতে। এদেরকে ছোট সাইজের গরু বলা হয়ে থাকে।
তিনি জানান, দুই বছরের মধ্যে গরু পরিপূর্ণতা পায়। আর সাধারণত আট মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে তাদের প্রজনন ক্ষমতাও তৈরি হয়।
গরুর গ্রোথ হরমোনের তারতম্যের কারণেও রানির আকার ও ওজন কম হতে পারে। এটি আর বড় হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম বলেন, গরুটি এখানে আনার পর থেকেই আমরা দেখভাল করছি। ছোট্ট এই গরুর শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। তবে এর উচ্চতা বা ওজন আর বাড়বে না। কোরবানি সামনে রেখে ছোট্ট রাণিকে ৫ লাখ টাকায় কিনে নিতে চেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তবে ‘শখের গরু’ বলে বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেন শিকড় এগ্রোর ম্যানেজার (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) তানভীর হাসান। তিন বছর আগে সাড়ে ৫ একর জমি লিজ নিয়ে শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গড়ে ওঠে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামেও তাদের শাখা রয়েছে। গয়াল, শাহী গয়াল, দেশাল, হাসা, মিরকাদিম, ভুট্টি, আমেরিকান ব্রাঙ্গাস, ফ্রিজিয়ান, ব্রাহমা, রেড চিটাগাংসহ বিভিন্ন জাতের আরও ১৫২টি গরু রয়েছে আশুলিয়ার এ ফার্মে। এছাড়া ভারতের রাজস্থানের তোতাপড়ি, পাহাড়ী গাড়ল ও দেশি জাতের ৭৫টি ছাগল রয়েছে। শখের বসে বিভিন্ন জাতের পাখি, কবুতর ও হাঁস পালনের কথাও জানালেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সুফিয়ান। তার বিশ্বাস, তাদের রানি ঠিকই গিনেস বুকে জায়গা করে নিতে পারবে। এক দেখাতেই এ গরুটিকে কোলে তুলে আদর করতে মন চাইবে সবার। সৌন্দর্যে রানি যেমন অদ্বিতীয়, তেমনি এর আগে গিনেস রেকর্ড গড়া পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু মানিকিয়ামের থেকেও সে ছোট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫৯১ টাকার গ্যাস গেট পার হলেই ৮৫০ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধউপজেলায় মৃত্যু বাড়ছে