ছুরিকাঘাতের ঘা শুকানোর আগে ৩৮ দিনের মাথায় এবার এসিড সন্ত্রাসের শিকার হলেন কক্সবাজারের রামুর সেই টিপু বড়ুয়া ( ৩৪) ও দীপক বড়ুয়া (৩৩) নামের দুই যুবক। গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১০ টার দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ঘরে ফেরার পথে রামুর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী স্টেশনের ভিক্টরপ্লাজার সামনে প্রকাশ্যে তাদের ওপর এসিড ছুঁড়ে মারার ঘটনা ঘটে ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আহতদের ভগ্নিপতি পুলিশ সদস্য (বর্তমানে চট্টগ্রাম সিআইডিতে কর্মরত) নিকেল বড়ুয়া পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটান। নিকেল বড়ুয়া বর্তমানে সিআইডি চট্টগ্রাম বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন।
এসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়া রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দ্বীপ শ্রীকুল গ্রামের নিরধন বড়ুয়া আর দীপক একই গ্রামের শুভধন বড়ুয়ার ছেলে। উল্লেখ্য, এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার পথে রামু শ্রীকুল মৈত্রী বিহারের সামনে এই দুই যুবককে ছুরি ও ক্ষুর দিয়ে গুরুতর আঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার ৩৮ দিনের মাথায় তারা আবার হামলার শিকার হন।
দীপক বড়ুয়া জানান, রাতে রামু উপজেলা গেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। এ সময় রামু বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন ভিক্টরপ্লাজার সামনে পৌঁছালে চলমান একটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে এসিড ছুঁড়ে মারা হয়। এতে মুহূর্তেই তাদের শরীর ঝলসে যায়। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় তারা দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান।
চমেক হাপসাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, টিপু বড়ুয়া ও দীপক বড়ুয়া নামে দুইজন কেমিক্যাল বার্ণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে টিপু বড়ুয়ার ২০ শতাংশ ও দীপক বড়ুয়ার ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু পোড়া রোগী ৪৮ ঘণ্টার আগে শঙ্কামুক্ত বলার সুযোগ নেই। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
এসিড সন্ত্রাসের শিকার গুরুতর আহত টিপু বড়ুয়া জানান, তার ছোট বোন ইমু বড়ুয়ার সঙ্গে ২০১৬ সালে হাজারীকুল গ্রামের মৃত প্রদীপ বড়ুয়ার ছেলে পুলিশের কনস্টেবল নিকেল বড়ুয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বোনের সাথে পারিবারিক কলহ লেগে আছে। নিকেল ২০১৯ সালে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং তাকে বিয়ে করে। পরে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করলে ওই মেয়েকে আপোষ মীমাংসা করে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে আমার বোন তার সঙ্গে আছে।
টিপু বলেন, ‘মামলার পর থেকে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে নিকেল। আমাকে হত্যার জন্য একের পর এক হামলা করছে। ছুরিকাঘাতের ঘটনার মাসখানেক আগে তার গ্রামের রিপন ও কলঘর বাজারের বেলাল নামের দুই বখাটে আমার ঘরে এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। এর এক মাস পর ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।’ তিনি বলেন, ছুরিকাঘাতের সেই ক্ষত এখনো পুরোপুরি শুকায়নি। ৩৮ দিনের মাথায় আবার এসিড নিক্ষেপ করা হলো। নিকেলই আমাকে হত্যার টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।’ তবে অভিযুক্ত নিকেল বড়ুয়া ঘটনার পুরোটাই অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে যাব। আমার মা মারা গেছে, আজ সাপ্তাহিক সংঘদান ছিল। আমি এ সব নিয়ে ব্যস্ত।
এ দিকে ১৭ সেপ্টেম্বরের ছুরিকাঘাতের ঘটনায় রামু থানায় মামলা হলেও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে রামু থানার ওসি (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে জানার জন্য আমি ভিকটিমের বাড়িতে অবস্থান করছি।’
এ ঘটনায় ভিকটিমদের ভগ্নিপতি পুলিশ সদস্য জড়িত কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কথা আমরাও শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘নিকেল বড়ুয়া মায়ের মৃত্যুর কারণে বর্তমানে ছুটিতে আছে। তার ব্যাপারে এ রকম আরও অভিযোগ আছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।’ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।