ঈদের ছুটির কয়েকদিন বিরতির পর আবার চট্টগ্রামের নাগরিক জীবনে স্বরূপে ফিরে এসেছে লোডশেডিং। গত ৯ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ভাবে ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটি থাকায় চট্টগ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল না। মানুষ স্বস্তিতে ঈদ ও নববর্ষ উদযাপন করেছেন। কিন্তু গত ১৫ এপ্রিল অফিস–আদালত খোলার সাথে সাথে লোডশেডিং আবার শুরু হয়েছে।
বৈশাখের শুরুতেই চট্টগ্রামে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বৈশাখের কাঠফাঁটা রোদের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। রেহাই পাচ্ছে না প্রাণীকুলও। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যারাই প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তারা যাত্রাপথে একটুখানি স্বস্তির আশায় মানুষ বৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় নিলেও স্বস্তি পাচ্ছেন না, তীব্র গরমের মাঝে প্রকৃতিতে বাতাসের মাত্রা কমে যাওয়ায় অস্বস্তি আরো বাড়ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রামে দিনদিন লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। ৮টি কেন্দ্রে নামমাত্র উৎপাদন হচ্ছে ৮০ মেগাওয়াট। মাদারবাড়িসহ হিসেব করলে চট্টগ্রামে চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চট্টগ্রামে এখন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ১৩শ’ থেকে প্রায় ১৫শ’ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। গত ১৫ এপ্রিল অফিস খোলার দিন চট্টগ্রামে ১২০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং ছিল। এর আগে ১৪ এপ্রিল কোনো লোডশেডিং ছিল না। গতকালও লোডশেডিং ছিল। চট্টগ্রামের উৎপাদন এবং লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে উৎপাদন ভালো হচ্ছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় ১৭৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। চাহিদা ছিল ১৩৭৫ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে দুপুরে পাওয়া গেছে ১২৯৮ মেগাওয়াট। দিনে লোডশেডিং ছিল ৭৭ মেগাওয়াটের মতো। সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে উৎপাদন হয়েছে ১৯৪৩ মেগওয়াট। চাহিদা ছিল ১৪৭৪ মেগাওয়াট। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কোনো লোডশেডিং ছিল না। চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া গেছে। তবে সোমবার কিছুটা লোডশেডিং ছিল উল্লেখ করে প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, সোমবার ১২০ মেগওয়াটের মতো লোডশেডিং ছিল। তিনি বলেন, মাদারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত পিজিসিবি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ মেঘনাঘাটে চলে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ এখানো আমরা রিসিভ করতে পারছি না। মাত্র ৩শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা রিসিভ করতে পারছি।
পিডিবি চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালকের (জনসংযোগ) দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বাঁশখালীতে অবস্থিত এসএস পাওয়ার প্লান্ট থেকে ৪৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়াও শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২১২ মেগাওয়াট, রাউজার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট থেকে ১২২ মেগাওয়াট, দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫১ মেগাওয়াট, হাটহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৬৩ মেগাওয়াট, ইউনাইটেড পাওয়ার থেকে ৪২ মেগাওয়াট, জুলধা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৮০ মেগাওয়াট, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৪ নম্বর ইউনিট থেকে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এদিকে মাদারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৬৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তবে বেশির ভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্রই বন্ধ।