এই গরমে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখবেন কীভাবে

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

গরমে অবসাদ বোধ করা আর হিট স্ট্রোকের বেশ কিছু আলাদা লক্ষণ রয়েছে। আর সেগুলোর পার্থক্য জানলে প্রাথমিক বিপদ কাটানো যাবে। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও লুজিয়ানার সেন্টারওয়েল সিনিয়র প্রাইমারি কেয়ারের মেডিকেল কর্মকর্তাদের বিভাগীয় প্রধান ও মেডিসিন চিকিৎসক টেরিসা ব্রাউন বলেন, দেহের তাপমাত্রা কমানোর পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ হারালে এই দুই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা থেকে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার দিকে বাড়তে থাকলে শরীরে তরল ও লবণের মাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রায় কমে যায়। ফলে দেখা দেয় ক্লান্তিবোধ, অতিরিক্ত ঘাম, হৃদগতি বৃদ্ধি, মাথা হালকা লাগা, বমি বমি লাগা ও বমি হওয়া। খবর বিডিনিউজের।

বেশিরভাগেরই এই অবস্থায় তেমন কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। তবে বয়স্কদের প্রতি নজর বেশি দিতে হবে। এই অবস্থায় কেউ পড়লে দ্রুত ছায়াতে ও অপেক্ষাকৃত শীতল জায়গায় নেওয়া, পানি পান করানো ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।

অন্যদিকে গরমে হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়ার পাশাপাশি চেতানা হারানো হলো হিট স্ট্রোকের লক্ষণ। এক্ষেত্রে দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর। এই অবস্থায় দেহের ভেতরের কোষগুলো ভাঙা শুরু করে। সাধারণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো কাজ করার ক্ষমতা হারাতে থাকে। তাই জরুরি ভিত্তিরে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আর এক্ষেত্রে শরীরকে ঠান্ডা করার ব্যবস্থা নেওয়াই হলো আসল বিষয়। মনে রাখতে হবে আধা ঘণ্টার মধ্যে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে আসতে পারলে বিপদ। তাই দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

পানিশূন্যতায় ভোগা যাবে না : অতিরিক্ত তাপে অনেকক্ষণ থাকলে দেহ আর্দ্রতা হারাবে। পানিশূন্যতার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে গাঢ় রঙের প্রস্রাব হওয়া। এছাড়া ঘাম কম হওয়া, জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি হওয়া ও দুর্বলতা বোধ হবে। জানা বিষয়গুলো ছাড়াও পানিশূন্যতার লক্ষণ বয়সের ভিত্তিতে ভিন্ন হতে পারে।

ডা. ব্রাউন বলেন, বয়সের সঙ্গে দেহের তরল ধারণের ক্ষমতা হারায়। তাই তৃষ্ণার্ত বোধ করলে অবশ্যই পানি পান করতে হবে।

ত্বকের সুরক্ষা নিতে হবে : সবার উচিত প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। মনে রাখতে হবে সানস্ক্রিন শুধু সমুদ্র সৈকতে মাখার জিনিস নয়। সুর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখতে মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন মাখা উচিত।

নিউ ইয়র্কে অবস্থিত স্কিন ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, পাঁচ মাত্রা বা এর অধিক সানবার্ন বা রোদে পোড়ার কারণে মারাত্মক ত্বকের ক্যান্সার মেলানোমা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি সাবধান করছে, বয়স্কদের এই সমস্যাতে ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এক্ষেত্রে ব্রোড স্পেক্ট্রাম সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (এসপিএফ) ব্যবহার করা উপকারী। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানাচ্ছে, ব্রোড স্পেক্ট্রাম ছাড়া বা এসপিএফ ১৫এর নিচের সানস্ক্রিনগুলো শুধু রোদে পোড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে না। পাশাপাশি গরমে হালকা রঙের, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। সেই সঙ্গে সানগ্লাস ব্যবহার করা ও যতটা সম্ভব নিজেকে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস খেয়াল করা : কবে বৃষ্টি হবে সেটা দেখার অভ্যাসের পাশাপাশি কোন দিন কতটা গরম পড়তে পারে সে বিষয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখার অভ্যাস গড়তে হবে। বর্তমানে আবহাওয়া অফিস ছাড়াও মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমেও আবহাওয়ার খবর রাখা যায়।

তাপদাহ ছাড়াও দীর্ঘক্ষণ গরমের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কড়া রোদ নানা ক্ষতি করে। তাই তাপ থেকে রক্ষা পেতে আবহাওয়াভিত্তিক অ্যাপের দিকে নজর দিন। কোন সময় কতটা তাপমাত্রা থাকছে, অতিবেগুনি রশ্মির মাত্রা কতটা থাকতে পারে সেসব বুঝেই বাইরে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন ডা. ব্রাউন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধছুটির পর ফিরল লোডশেডিং