ছুটির দিনে লোকে লোকারণ্য

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা বাঙালি জাতিসত্তা, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সুরক্ষার আদর্শিক মঞ্চ। বিজয় মেলা বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রেরণা যুগিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাকে প্রজন্ম পরম্পরায় ধারণ করে আসছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরাই এ আয়োজনের প্রধান উপকরণ। তাদের মধ্যে কোনো ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নেই। ক্রেতারা এখানে স্বল্পমূল্যে তাদের কাঙ্খিত পণ্যটি পেয়ে থাকেন বলে সারা বছর এ মেলার জন্য তারা মুখিয়ে থাকেন। তাই এ মেলা সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। করোনার কারণে হয়নি লালদীঘির জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা। যে মেলা থেকে চট্টগ্রামের মানুষ সংগ্রহ করে বছরের গৃহস্থালি সামগ্রী। এ ঘাটতি পূরণে ভিড় বাড়ছে আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পণ্য মেলায়। টিকিট ছাড়া এ মেলায় ভিড় যেমন বাড়ছে, তেমনি বেচাকেনাও।
‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বীর বাঙালির অহংকার’ স্লোগানে ডিসেম্বরের প্রথম দিন উদ্বোধন হয়েছে পণ্য মেলার। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টিতে কিছুটা ছন্দপতন হলেও বেচাকেনা তেমন একটা কমেনি। বিক্রেতারা আশা করছেন, মাসব্যাপী মেলায় তারা কাঙ্খিত পরিমাণ পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের আয়োজনে ৩৩ বছর ধরে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, জামদানি শাড়ি থেকে বিশাল এলইডি টিভি; কী নেই মেলায়! মাটির তৈরি তৈজসপত্র, শিশুদের খেলনা, মেয়েদের গহনা, শাল, থ্রিপিস, জুতা, গৃহস্থালি সামগ্রী, আচার, মুখরোচক খাবার, মুড়ি-মুড়কি, পিঠাপুলিসহ বিভিন্ন ধরনের স্টল রয়েছে। মাদারবাড়ি থেকে মেলায় এসেছেন আনজুমান বেগম। তিনি বলেন, মোটামুটি ভালো মানের পণ্যসামগ্রী এসেছে মেলায়। কয়েকটি স্টল আছে এক দামের। বাকিগুলোতে দরকষাকষি করে কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, সংসারের টুকিটাকি প্রায় সব জিনিসই মিলছে এবারের মেলায়।
পাথরঘাটা থেকে নিজের ও বোনের পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে মেলায় ঘুরছিলেন ফাতেমা বেগম। বললেন, ছোটবেলা থেকেই এ মেলার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে আমার। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই বান্ধবী বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসতাম। এখন নিজের সন্তানদের নিয়ে আসি। ওরাও খুব পছন্দ করে।
কম দামের পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি দেখা গেল। সে কারণে ছোটখাটো গয়না ও গৃহস্থালি পণ্যের দোকানেই ক্রেতার ভিড় বেশি। এসব ক্রেতার প্রায় সবাই নারী। ঢাকা থেকে স্বামী ও শাশুড়ির সঙ্গে এসে মেলায় স্টল দিয়েছেন দিলওয়ারা বেগম। পুঁতি ও ক্রিস্টালের গয়না বিক্রি করছেন তাঁরা। দিলওয়ারা বেগম জানান, তাঁর দোকানে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকার মধ্যে গয়না বিক্রি হচ্ছে। তবে ৫০ টাকা দামের কানের দুল এবং ১৫০ টাকা দামের গয়নার সেটের বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশি।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব মো. ইউনুস আজাদীকে বলেন, অন্যান্য মেলাগুলোর নামের সঙ্গেই তো ‘বাণিজ্য’ আছে। কিন্তু আমাদের ওই ধরনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। এখানে কম দামে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফলে কম দামে সব শ্রেণির ক্রেতারা মেলা থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিতে পারছেন। একই সঙ্গে দেশীয় হস্ত ও কারুশিল্পের প্রসার ঘটানোও আমাদের লক্ষ্য।
মেলার ইজারাদার হাজি মো. সাহাবউদ্দিন আজাদীকে জানান, একটি প্যাভেলিয়নসহ ২০০ ছোট-বড় স্টল রয়েছে এবারের মেলায়। করোনাকাল হওয়ায় মেলায় আসা দর্শক-ক্রেতাদের প্রবেশ মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা করা হয়েছে। তিনি জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ভালো মানের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছেন। তাই সাড়াও পাচ্ছেন বেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শনে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান
পরবর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়াও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত : ফখরুল