নগরী থেকে সিএনজি টেক্সি ছিনতাই বা চুরি করে কোন গ্যারেজে রাখে না চক্রটি। কারণ পুলিশ যেকোন ভাবেই গ্যারেজের সন্ধান পেয়ে যাবে। তাই তারা গ্যারেজের পরিবর্তে লোহাগাড়ায় একটি নির্দিষ্ট পুকুরে ডুবিয়ে রাখে চোরাই সিএনজি। সুযোগমতো পুকুর থেকে তুলে বিক্রি করে থাকে। এ চক্রের সন্ধান পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ সেই পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে একটি সিএনজি টেক্সি খুঁজে পায়।
পরে পুকুরে ডুবিয়ে রাখার অপেক্ষায় থানা আরো দুটি সিএনজি টেক্সিও উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চক্রের দুই সদস্যকে। গতকাল বুধবার ভোর পর্যন্ত টানা দুইদিন চট্টগ্রাম নগরী ও লোহাগাড়া এলাকায় অভিযান চালায় কোতোয়ালী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার দু’জন হল- মো. রায়হান (২৯) ও রবিউল হোসেন রমিজ (২৫)। তাদের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের মাইজভিলা গ্রামে।
কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির আজাদীকে জানান, সোমবার রাত তিনটার দিকে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির সময় সন্দেহজনক একটি সিএনজি টেক্সি আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক রায়হান স্বীকার করে যে, টেঙিটি ছিনতাই করা হয়েছে। সেটি নিয়ে লোহাগাড়ার চরম্বা এলাকায় যাচ্ছিল বলে তথ্য দেয়। এরপর পুলিশ রায়হানকে নিয়ে লোহাগাড়ায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একই চক্রের সদস্য রবিউলকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানায়, তার হেফাজতে দু’টি ছিনতাই করা সিএনজি টেঙি আছে। এর মধ্যে একটি চরম্বা ইউনিয়নের তেলেবিলা গ্রামে পাহাড়ের পাদদেশে একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। রবিউলের তথ্যমতে আরেকটি টেঙি বুধবার ভোরে চরম্বা ইউনিয়নের টংকাবতী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, টংকাবতী এলাকা থেকে উদ্ধার সিএনজি টেঙিটির মালিক নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান। গত ২১ জুন রাতে সিএনজি টেঙি ভাড়া করে রবিউল ও রায়হান কোতোয়ালী থেকে মইজ্জারটেক এলাকায় যায়। যাত্রাপথে চালকের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাকে অজ্ঞান করে সেখানে ফেলে দেয় এবং টেঙিটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি- রবিউল-রায়হানদের চক্রে লোহাগাড়া ভিত্তিক ১০-১২ জন সদস্য আছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় রেকি করে ছিনতাইয়ের জন্য অটোরিকশা টার্গেট করে। নির্জন এলাকায় অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে চালক কোথাও গেলে সুযোগমতো তারা সেটি নিয়ে পালিয়ে যায়। অথবা তারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে একই স্থানে যাওয়ার জন্য একাধিক সিএনজি টেঙি ভাড়া নেয়। যাত্রাপথে চালককে নেশাদ্রব্য খাইয়ে কিংবা চোখে স্প্রে প্রয়োগ করে অজ্ঞান করে টেঙি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
অভিযানে অংশ নেওয়া এএসআই অনুপ জানান, এই চক্রের সদস্যদের মধ্যে চারজনকে মাসখানেক আগে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তার দু’জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।