ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে

চবি প্রশাসনের কোনো প্রকার গাফিলতি কাম্য নয়

| রবিবার , ২৪ জুলাই, ২০২২ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানে ছাত্রী হেনস্তার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অনেক শিক্ষকও অংশ নেন। বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী আজাদীকে বলেন, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নিকটেই একজন শিক্ষার্থী নিরাপদ না, এটা খুবই দুঃখজনক। প্রশাসন সেটার বিচার না করে উল্টো ১০টার মধ্যে হলে ঢোকার নির্দেশ দিচ্ছে, তাহলে বোঝা যাচ্ছে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। আর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার কারণ হলো বিচারহীনতা। আর শক্তিশালী একটি মহল বার বার তাদের সমর্থন করছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রী হেনস্তার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর কোনো বিচার করছে না। বিপরীতে ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের নিজেদের ক্যাম্পাসেই নিরাপদ নই। আমরা এই ২১শ একর ক্যাম্পাসে আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা চাই। সেই সঙ্গে ছাত্রী হেনস্তার তদন্তপূর্বক সঠিক বিচার চাই। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। এ সময় ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি? নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই, নাম অবশ্যই প্রশাসনের জানা, তবে মামলা কেন অজ্ঞাতনামা- এ সব স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড লিখে প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমাদের মেয়ে লাঞ্ছিত হয়েছে, আমরা এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেব না। দোষীদের শনাক্তের কাজ চলছে। কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এই মহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামী রবিবার বলা যাবে। শাস্তি হয়ে যাবে। প্রকৃত অপরাধী যেই হোক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রী হেনস্তার ঘটনার জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তারা উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত বলে জানান। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ১৭ জুলাই (রোববার) রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। নিরাপদ ও ভয়হীন পরিবেশ জ্ঞান চর্চার পূর্বশর্ত। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। সমিতি বিশ্বাস করে এই ব্যাপারে প্রশাসন যথেষ্ট সক্ষম, আন্তরিক এবং আশা করে অতি অল্প সময়ে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে। এই ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো প্রকার গাফিলতি ও ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা শিক্ষক সমাজ মেনে নেবে না।
ঘটনার ৫ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিবৃতি প্রদানকে শিক্ষার্থীরা বিস্ময়ের চোখে দেখছে। তবু এই জোরালো বিবৃতির জন্য আমরা সমিতিকে ধন্যবাদ জানাই।
সাম্প্রতিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে জানায়, প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এ ঘটনা ঘটছে। শুধু ক্যাম্পাসের ভেতরেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনও ছাত্রীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে এসব ঘটনায় একটি সুনির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়নের শিকার হওয়া ছাত্রীদের দায়িত্ব নিচ্ছে না বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
আসলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কঠোর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। কোনো ক্রমেই তার উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা কাম্য নয়। ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা ডব্লিউএইচওর
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে