চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যিনি ছিলেন দৃঢ়

রাশেদ রউফ | শনিবার , ১২ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতিমুক্তির প্রবর্তক। পরনির্ভরশীলতা ত্যাগ করে নিজস্ব সম্পদের ওপরে দেশকে শক্ত করে দাঁড় করানো ছিলো বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মূল আদর্শ ও লক্ষ্য। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে বঙ্গবন্ধুর সামনে ছিলো ভগ্ন দশায় থাকা অবকাঠামো, বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও কঠিন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। সব জটিল চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেন বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সুনিপুুণভাবে। এ সময় তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের সব নীতি ছিল দেশের মানুষের স্বার্থকে ঘিরে।

অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এক প্রবন্ধে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন যে, শিক্ষা ছাড়া দেশ ও জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। দেশ গঠন করতে হলে শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। বস্তুত মানবদক্ষতা ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব নয়। যার জন্য প্রয়োজন শিক্ষার, বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার। কিন্তু সক্ষমতার আরেকটি দিক হচ্ছে সুস্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে উচ্চমানের দক্ষতা কাজে লাগানো যাবে না। তাই তিনি মেডিকেল শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার কথা বলেছেন। অর্থাৎ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য মূল হাতিয়ার ডাক্তার। সেটা তিনি অনুধাবন করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন, সমাজদর্শন ও শিক্ষাদর্শনের মৌলিক বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে। তাঁর শিক্ষাদর্শন ছিলো : গণমুক্তির মানবতাবাদী দর্শন। তিনি বিশ্বাস করতেন গণমুখী শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক ও মৌলিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। আর তাঁরই নির্দেশনায় সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী সমাজ গঠনমূলক একটি সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়নের জন্য ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই ড. কুদরাতখুদার নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা বলেন, বিজয়ের মাত্র সাত মাসের মতো সময়ের মধ্যে এই কমিশন গঠন করা দেশের জন্য একটি সময়োপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করার প্রতি বঙ্গবন্ধুর অপার আগ্রহের পরিচয় বহন করে। ১৯৭৪এর মে মাসে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। এতে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল : শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া, বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটানো, নারী শিক্ষায় জোর দেওয়া, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমপ্রসারণ করা এবং শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন। এই প্রতিবেদনকে নীতিতে রূপান্তর করে বাস্তবায়ন করার সময় পাননি বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫এর ১৫ আগস্ট তাঁর নির্মম হত্যার পর, তাঁর প্রদর্শিত পথে শিক্ষাব্যবস্থা ও কার্যক্রম এগোয়নি।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকদিনও ইন্টার্নশিপ না করে তিনি ইন্টার্ন সভাপতি
পরবর্তী নিবন্ধজলাবদ্ধতা নিয়ে সমন্বয়ের তাগিদ