চেকপোস্টকে যেভাবে টার্গেট করা হয়

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

লালদীঘির জেলা পরিষদ মার্কেটের তৃতীয় তলা। সেখানের সুগন্ধা হোটেলের ৪০৩ নম্বর রুমে দুদিন আগে উঠেছিলেন বোমা মিজান ও আত্মঘাতী হয়ে মারা যাওয়া জঙ্গি আবুল হোসেন। সেখান থেকে কোর্ট হিলকে রেকি করা হয় এবং স্পট হিসেবে টার্গেট করা হয় চেকপোস্টকে। নির্দেশনায় ছিলেন বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানি।
ঘটনার দিন ভোরে জাবেদ ইকবালের বৌ বাজারের বাসা থেকে বোমা এনে রাখেন বোমা মিজান এবং পরিকল্পনা মতো আবুল হোসেনকে প্রন্তুত করা হয়। একপর্যায়ে নির্দেশনা অনুযায়ী হকার মার্কেট ও রেজিস্ট্রি অফিসের পাশের রাস্তা দিয়ে আবুল হোসেন হেঁটে কোর্ট হিলের উপরে উঠতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ সকাল সাড়ে ৮টার কিছু সময় পর কোর্ট হিলে উঠেন। আদালতে দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষ্য ও জবানবন্দিতে উঠে আসে এসব তথ্য।
আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে জাবেদ ইকবাল বলেছিলেন, ২০ নভেম্বর ঢাকা থেকে মিজান ও সানি বোমার বিভিন্ন সরঞ্জামসহ আমার কাছে আসে। নগরীর কর্নেল হাট থেকে রিসিভ করে আমার বৌ বাজারের বাসায় নিয়ে যাই। আমার বাসাতেই মিজান একটি বোমা তৈরি করে। সানি হোসাইন আহমেদকে (আবুল হোসেন) আত্মঘাতী হিসেবে পাঠান। একপর্যায়ে সুগন্ধা হোটেলের ৪০৩ রুম মিজান ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রার করি। তবে তা মিজান নামে নয়, কবির ওরফে রানা নামে। উক্ত হোটেলে মিজান ভাই ও হোসাইন আহমেদ দুদিন ছিলেন। মিজান কোর্ট হিল রেকি করে আহমেদকে সাইড ঠিক করে দেয়। বাংলা ভাই ও সানির নির্দেশে কোর্ট হিলের চেকপোস্টে বোমা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সকালে মিজান ভাই হোটেল থেকে আমার বাসায় যায় এবং তৈরি করা বোমাটি নিয়ে সুগন্ধা হোটেলের ফিরে আসে। অতঃপর কোর্ট হিলের চেকপোস্টে বোমা হামলা হয়।
মামলার বাদী ও পুলিশ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান এজাহারে উল্লেখ করেন, কোর্ট হিলের আইনজীবী ভবন ও নতুন আদালত ভবনের সংযোগকারী ওভারব্রিজের নিচে আমরা তল্লাশি ডিউটি করছিলাম। সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটের দিকে সেখানে ২০/২২ বছরের এক যুবক আসে। তাকে তল্লাশি করার চেষ্টা করলে সে তার শরীরের সাথে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। মুহূর্তে বিকট শব্দে পুরো আদালত প্রাঙ্গণ প্রকম্পিত হয় এবং কালো ধোঁয়ায় পুরো এলাকাটি আচ্ছাদিত হয়ে যায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য রাকিব বড়ুয়া, প্রকাশ, লুৎফর রহমান, রফিকুল ইসলাম, ইছা সরকার, শাহাজাহান, প্রাণতোষ বড়ুয়া, কবির, সানি দাশ, সাইদুল সরকার, রাজীব তালুকদার, আব্দুল মজিদ, রায়হান, লিটন মিয়াসহ আরও কয়েকজন মারাত্মক জখম ও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত আহত হন এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, আহত অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এবং নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আমি নিজেও বোমার আঘাতে বাম পায়ের গোড়ালিতে জখম হই। তাৎক্ষণিক অন্যদের সহায়তায় আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাই এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করি। হাসপাতালে নেওয়ার পর আহতদের মধ্যে কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া ও সীতাকুণ্ডের সাহাবুদ্দিন নামের একজন মারা যায়। হাত-পা উড়ে যাওয়া আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকেও চমেক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। আমি নিজেও প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করি।
এদিকে ঘটনার পরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী নামের একজন আইনজীবী আজাদীকে বলেন, আমার বাসা ছিল বিবিরহাট এলাকায়। রিকশা নিয়ে হকার্সের মুখে নামি। তখনও জানতাম না কোর্ট হিলে কী হচ্ছিল। সময় তখন ৯টার কিছু পর। উপরে উঠে দেখি মানুষের জটলা। প্রায় ৩ থেকে ৪শ মানুষ। সবার চোখে-মুখে আতংক। এদিক-ওদিক পড়েছিল মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ। প্রায় ২০ মিনিট আমি সেখানে ছিলাম। বলা যায়, হতভম্ব হয়ে পড়ি। বর্তমান বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের স্পেশাল পিপি মেজবাহ বলেন, এ ঘটনার পর আদালত পাড়া প্রায় এক বছর আতংকের মধ্যে ছিল। তবে একসময় সবকিছু স্বাভাবিক হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু ওয়ার্ডে তিন-চার গুণ বেশি রোগী
পরবর্তী নিবন্ধআজ আমাদের পুরো পরিবার শেষ