চুয়েটে স্নাতকের ক্লাস পরীক্ষা ৭ দিন বন্ধ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ১৫ জুন, ২০২২ at ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধের জেরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) কর্তৃপক্ষ স্নাতক পর্যায়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছিল তার সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিন্ডিকেটের ১২৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও সব পরীক্ষা ২১ জুন পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আগামী ২২ জুন সব হল খুলে দেয়া হবে এবং ওইদিন থেকে সব শিক্ষা কার্যক্রম আগের মতো চলবে। তবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিষয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে ১৭ জুলাই।
পূর্বের বিজ্ঞপ্তিতে ৪ দিন ধরে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ১৪ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়া ৬ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি থাকবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ছিল আগামী ১৭ জুলাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, প্রভোস্ট এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সমন্বয়ে দুপুরে আয়োজিত এক জরুরি সভায় উক্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদের মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে ও ছাত্রীদের আজ সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে হল ভ্যাকেন্ট করতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় অনলাইনে আয়োজিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় দুপুরের জরুরি সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
হেলমেটধারীদের টহল : ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জেরে গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসে হেলমেটধারীদের টহল দিতে দেখা গেছে। এদিন সকাল ৫টা থেকে সশস্ত্র অবস্থায় হলুদ হেলমেট পরা ১৫-২০ জনের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে অবস্থান নেয়। তাদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এর আগে গতকাল সকাল ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহনের বাস চট্টগ্রাম শহরের দিকে রওনা দিলে হেলমেটধারীরা বাসগুলো আটকে পুনরায় গ্যারেজে ফেরত পাঠায়।
এর আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি ও সশস্ত্র অবস্থানের কারণে গত সোমবার দিনভর ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। এরপর রাতে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়। এতে পরিস্থিতি আরো ভীতিকর হয়ে ওঠে।
এ অবস্থায় অঘটনের আশঙ্কায় রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীম, রাউজান মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন ও চুয়েটের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্টরা চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বরে রাতভর অবস্থান করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সোমবার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী চুয়েটের ১২টি বিভাগের ২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা গত সোমবার চুয়েট থেকে ছেড়ে যাওয়া বিকাল ৫টার গাড়িতে ড. কুদরত-এ-খুদা হলের শিক্ষার্থীদের উঠতে দেয়নি। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা দায়িত্বরত শিক্ষকদের প্রকাশ্যে গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বলেন, যারা এভাবে দিনেদুপুরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে এবং শিক্ষকদের গালিগালাজ করে তারা কেউ সুস্থ মস্তিষ্কের নয়। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট সৈয়দ মাসরুর আহমেদকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জড়িতদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহেশখালীর দুই ইউপিতে আজ ইভিএমে ভোট
পরবর্তী নিবন্ধপদ্মা সেতু জাদুঘর নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর