সিনোফার্মের তৈরি ৯১ হাজার ২০০ ডোজ চীনা টিকা পৌঁছেছে চট্টগ্রামে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে এসব টিকা চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ভ্যাকসিন গ্রহণ কমিটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির কাছ থেকে এ টিকা গ্রহণ করে। টিকা বুঝে নেওয়ার পর তা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণে রাখা হয়েছে। টিকা গ্রহণের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন। এদিকে, টিকা প্রাপ্তির পর আজ শনিবার থেকে চীনা এই টিকার প্রয়োগ শুরু হচ্ছে চট্টগ্রামে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে এ টিকাদান শুরু হচ্ছে। যদিও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকাদান চলবে মেডিকেল কলেজেই।
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকাদানে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, যেহেতু টিকা চলে এসেছে, সেহেতু টিকাদান শুরু করতে আর সমস্যা নেই। আমাদের সিডিউল করা আছে। সিডিউল অনুযায়ী শনিবার থেকেই শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু করা হবে। প্রথম দিন দুটি বুথে প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থীকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে বুথের সংখ্যা বাড়ানো যাবে।
অন্যদিকে, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকাদান আজ শুরু হলেও অন্যদের টিকাদান শুরুর বিষয়ে এখনো স্পষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকাদান পরবর্তী অন্যদের টিকাদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রতি জেলায় কেবল একটি কেন্দ্রেই টিকাদান : প্রতি জেলায় কেবল একটি কেন্দ্রেই সিনোফার্মের এ টিকা দেওয়া হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, যে জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই এ টিকা দেওয়া হবে। আর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল না থাকা জেলাগুলোতে জেলা সদর হাসপাতাল অথবা জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সাথে আলোচনা পূর্বক সিভিল সার্জন যেকোনো একটি হাসপাতালকে কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করবেন। সে হিসেবে চট্টগ্রামে কেবল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রেই এ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
কারা পাবেন সিনোফার্মের টিকা : স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিনোফার্মের এ টিকা প্রথম ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে। প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের এ টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে ২৮ দিন পর। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি নার্সিং কলেজ, আইএইচটি ও ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা এ টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এবার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কেবল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের এ টিকা দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া করোনায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সাংবাদিকদের মধ্য থেকে নিবন্ধন করেও কেউ যদি টিকা না পেয়ে থাকেন, তারাও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ টিকার প্রথম ডোজ পাবেন। এর বাইরে যে কেন্দ্রে সিনোফার্মের টিকাদান চলবে, ওই কেন্দ্রে টিকা গ্রহণের জন্য পূর্বে অনলাইনে নিবন্ধনকারীরাও এ টিকা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। আর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বড় প্রকল্পে কর্মরতদের পাশাপাশি মৃতদের সৎকারে নিয়োজিত কর্মী, চীনা নাগরিক এবং বিদেশগামী কর্মীদেরও এ টিকার অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে।
এদিকে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, সরকারি নার্সিং কলেজ, আইএইচটি ও ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ না পেলেও প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেখিয়ে এ টিকা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রথম ডোজ নিতে পারবেন। তবে দ্বিতীয় ডোজের আগে অবশ্যই তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম পুনরায় চালু হতে পারে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদানের প্রক্রিয়ায় এখনো কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকাদানে নির্দেশনা পেলেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও হয়তো মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা এখনো নির্দেশনা পাইনি। শনিবার বিকেলে অনলাইনে এ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের একটি সভা রয়েছে। সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে দুই দফায় ৮ লাখ ডোজের সামান্য বেশি (অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার) টিকা পায় চট্টগ্রাম। ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম ডোজ টিকাদান উদ্বোধনের পর গত ৮ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান শুরু হয় চট্টগ্রামে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজারের মতো টিকাগ্রহীতা তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামের (মহানগরসহ জেলায়) মোট ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নেন। হিসেবে প্রথম ডোজ নেওয়া আরো প্রায় লক্ষাধিক টিকা গ্রহীতা দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন। এরই মাঝে প্রথম ডোজ গ্রহণের পর অনেকের সময়ের ব্যবধান তিন মাস পার হতে চলেছে। অনেকের আরো বেশি। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
