স্কটল্যান্ড থেকে শুরু করেছিলেন শেষযাত্রা। মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছান লন্ডনে। প্রকাশ্য অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতাও শেষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করেন।
উইন্ডসর প্রাসাদে ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে স্বামী প্রিন্স ফিলিপের পাশে চিরশয়ানে গেলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এর মধ্য দিয়ে ৭০ বছরের এক অধ্যায়ের বর্ণাঢ্য যবনিকাপাত হলো। গতকাল ব্রিটেনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজপরিবারের সদস্যরা সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে যান রানিকে তার স্বামীর পাশে সমাহিত করতে। এরপর রাজকীয় সমাধিকক্ষে রানির মরদেহ নামানো হয়। এর আগে সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে আনুষ্ঠানিকভাবে রানির কফিনের ওপর থেকে রাজমুকুট এবং রাজদণ্ড সরিয়ে নেয়া হয়। আগের সব আচার সরাসরি দেখানো হলেও সমাহিত করার অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়নি। বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে বলা হয়, এটা ‘একান্তই পারিবারিক বিষয়’। খবর বিডিনিউজ ও বিবিসি বাংলার। উইন্ডসর প্রাসাদে রওয়ানা হওয়ার আগে রানির শবমিছিল ওয়েলিংটন আর্চে পৌঁছায় এবং সেখানে রানির কফিন রাজকীয় নৌবাহিনীর রাষ্ট্রীয় কামানবাহী শকট থেকে নামিয়ে একটি রাজকীয় শববাহী গাড়িতে তোলা হয়। রানিকে শেষ বিদায় জানাতে তার প্রিয় দুই কুকুর মিউক ও স্যান্ডিকে উইন্ডসর প্রাসাদের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে আনা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরালে নিজের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদে মারা যান রানি এলিজাবেথ। গতকাল সোমবার তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তার আগে চারদিন রানির মৃতদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য ওয়েস্টমিনস্টার হলে বিশ্রামে রাখা হয়েছিল।
সোমবার স্থানীয় সময় ১০টা ৪৪ মিনিটে ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে রানির কফিন যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনীর রাষ্ট্রীয় কামানবাহী একটি শকটে করে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নেওয়ার মধ্য দিয়ে রানির শবমিছিলের যাত্রা শুরু হয়। এ সময় রানির বড় ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস, তার বোন প্রিন্সেস অ্যান, দুই ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড, যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম, তার ভাই প্রিন্স হ্যারিসহ ব্রিটিশ রাজ পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা রানির কফিন অনুসরণ করেন। শবমিছিল ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের গির্জায় প্রবেশের সময় গির্জায় উপস্থিত দুই হাজার মানুষ উঠে দাঁড়িয়ে রানিকে সম্মান জানান। যাদের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজপরিবারের সদস্যসহ প্রায় পাঁচশ জন বিশ্বনেতা এবং কূটনীতিক ছিলেন।
গির্জায় রানির আত্মার শান্তি কামনা করে কমনওয়েলথের মহাপরিচালক ব্যারোনেস স্কটল্যান্ড প্রথমে বাইবেলের একটি অংশ পাঠ করেন। তারপর বিশেষভাবে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানের জন্য জুডিথ ওয়্যারের লেখা একটি গান বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস দ্বিতীয়জন হিসেবে বাইবেলের একটি অংশ পাঠ করে রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। গির্জায় উপস্থিত অন্যান্য নেতারাও একে একে রানি জন্য প্রার্থনা করেছেন। ১৯৫৩ সালের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠানের যে গানটি গাওয়া হয়েছিল তার শেষযাত্রাও সেই গানটি গাওয়া হয়। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে গির্জায় প্রার্থনার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় প্রার্থনা শেষে রানির শবমিছিল ৪৫ মিনিট যাত্রা করে ওয়েলিংটন আর্চে পৌঁছায়। রানির শবমিছিল পার হওয়ার সময় বিগ বেনের কাটা ৬০ সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ করে রাখা হয়েছিল। রানির শবমিছিল যেখান দিয়ে যাচ্ছে তার পুরো রাস্তার দুই পাশে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়ে রানিকে শেষশ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এ সময় ভিড়ের মধ্যে অনেককে চোখ মুছতে দেখা যায়।
১৯৫২ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জের শেষকৃত্যের পর এবারই বড় ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের কারো শেষকৃত্য হচ্ছে। রানির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাজ্যে কয়েকটি সিনেমা হল বন্ধ রাখা হলেও প্রায় ১২৫টি সিনেমা হলে রানির শেষকৃত্য প্রচারের জন্য খোলা রাখা হয়।