চিঠি

সনিয়া কাদেরী | সোমবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর সব বাবাদের কাছে

কেবল একটা আকুতি

ধন নয় দৌলত নয়

বাড়ি নয় গাড়ি নয়,

জমি নয়, সম্পত্তি নয়,

রেখে যেও একটা চিঠি,

ইমেইল নয়, টেঙট নয়,

ওয়াট্‌স অ্যাপ মেসেজ নয়,

পরম মমতায় নিজের হাতে লেখা একটা চিঠি;

তাতে লিখে যেও সন্তানকে

মন খারাপ না করতে, বলো

অদেখা মানেই অনুপস্থিতি নয়

কারণ বাৎসল্যের বিনাশ নেই’।

প্রতিদিনের সূত্রপাত যখন

হয় ভারাক্রান্ত মনে,

আরেকটি বাবাহীন দিন

আরেকটি নিঃসঙ্গ দীর্ঘশ্বাসে,

তখন তোমার সন্তান যেন দিনটা

শুরু করে তোমার সে চিঠি দিয়ে;

তাতে লিখো যখন এক চিলতে রোদ্দুর

এসে লুটিয়ে পড়ে রোজ সকালে,

মনটা তখন আলোয় রাঙিয়ে নিতে

কারণ তাতে সে পাবে বাবার স্নেহ

মাখা সেই নরম উষ্ণতা।

যখন নিঝুম শুনশান দুপুরে

বাবার কথা পড়বে মনে,

বলো একাকী বিষণ্ন সন্তানকে

তার কান পেতে ডাহুকের

ডাক শুনতে একমনে নির্জনে ;

একসময় একটানা পাখির

সেই অবিরাম কুঞ্জন নিশ্চয়ই

অর্থবহ হয়ে ধরা দিবে

ঠিক বাবার আদরমাখা বুলির মতন।

চিঠিতে অবশ্যই বলবে

আদরের প্রিয় সন্তানটিকে

একদমই মন খারাপ না করতে,

কারণ বিকেলের ঝিরিঝিরি

স্নিগ্ধ বাতাসের ছোঁয়ায়

একাকার হয়ে আছে তোমার স্নেহ,

তাকে ছেড়ে কোথাও যাওনি তুমি মোটেও।

সন্ধ্যা নামার আগে

যখন খুব করে মনে পড়বে

বাবার কথা, বলো তাকে

সুর্যাস্তের গোলাপী আলোয়

নবজীবনের সুধার সন্ধান করতে ,

কারণ সেই রাঙা আলোয়

মিলে মিশে আছে পিতৃস্নেহ

অফিস ফেরতা বাবার আলিঙ্গনের মতন।

নিদ্রাহীন গভীর রাতে

সন্তানটি যখন নীরবে অশ্র মোছে,

তোমায় ভেবে ভেবে আকুল হয়ে

অবশ্যই ওকে তখন মনে করিয়ে দিও

আকাশপানে তাকিয়ে

সবচে উজ্জ্বল তারাটি দেখে

গভীর বিশ্বাসে মেনে নিতে

অন্যজগতে তুমি ভালো আছো,

খুব খুব ভালো তাই

একদম যেন সে মন খারাপ না করে

আশ্বস্ত মনে ঘুমিয়ে পড়ে সময়মতন।

ধন নয়, দৌলত নয়

বাড়ি নয়, গাড়ি নয়;

জমি নয়, কোনো সম্পত্তি নয়

কিচ্ছু না, একরত্তিও নয়,

শুধু তৃষিত চাতকের মতন

ঘেঁটে পুরনো কাগজপত্র, নথি,

দলিল দস্তাবেজ, খেরোখাতা,

বাবার অজস্র বইপুঁথির মাঝে

তন্ন তন্ন করে খুঁজি সেই চিঠি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীতে পথচারীদের পাশে আসুন
পরবর্তী নিবন্ধমা স্নেহ বিলিয়ে দেন, শাশুড়ীমা স্নেহ জমিয়ে রাখেন