চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাফল্য আমাদের আশান্বিত করে

| বুধবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

আমাদের রোগবালাই যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি আমাদের চিকিৎসা সেবাও দিন দিন বাড়ছে। নিত্য নতুন আবিষ্কার হচ্ছে ওষুধ এবং নানা উপকরণ। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞান হলো রোগ উপশমের বিজ্ঞান কলা বা শৈলী। মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে রোগ নিরাময় ও প্রতিষেধক বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিত্য নতুন আবিষ্কার ও প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা বিজ্ঞান ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো চিকিৎসা বিজ্ঞানেও যোগ হচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কার। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে বিজ্ঞানীরা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কার ছিল চোখে পড়ার মতো।’ গত ১৮ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘২০৩০ সালের মধ্যেই ক্যান্সারের টিকা’ শীর্ষক সংবাদটি তেমনি আশাজাগানিয়া। সংবাদে বলা হয়েছে, তুর্কী বংশোদ্ভুত জার্মান বিজ্ঞানী দম্পতি উগুর শাহিন এবং ওজলেম তুরেসি এবার ক্যান্সারের টিকা উদ্ভাবনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বিশ্বকে আশার আলো দেখিয়েছেন।

এই দম্পতির নেতৃত্বেই জার্মানির প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজারের সঙ্গে মিলে কোভিড-১৯ টিকা বাজারে আনে। বায়োএনটেক যে প্রযুক্তিতে কোভিড টিকা তৈরি করেছে সেই একই প্রযুক্তি এবার মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করতে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, বর্তমান দশকের শেষদিকেই ক্যান্সারের টিকা মানুষের হাতে পৌঁছাতে পারে। শাহিন-তুরেসি দম্পতি বায়োএনটেকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ফাইজারের সঙ্গে মিলে বায়োএনটেক যুগান্তকারী এমআরএনএ প্রযুক্তিতে কোভিড টিকা তৈরি করে। তাঁরা বলেছেন, তারা এমন কিছু সাফল্য পেয়েছেন, যা আগামী বছরগুলোতে ক্যান্সারের টিকা উদ্ভাবনে তাদের আশা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক তুরেসি এমআরএনএ প্রযুক্তি পুনরায় ব্যবহার করে কীভাবে ক্যান্সারের টিকা উদ্ভাবন করা সম্ভব তা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ প্রযুক্তি কিছুটা ভিন্নভাবে ব্যবহার করে তারা দেখেছেন, সেটি করোনাভাইরাসকে আক্রমণ করার পরিবর্তে ক্যান্সার কোষকে আক্রমণ করার জন্য দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। এমআরএনএ প্রযুক্তি নির্ভর এই ক্যান্সারের টিকা কবে নাগাদ মানুষের হাতে পৌঁছাতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ২০৩০ সালের আগেই মানুষের হাতে পৌঁছাবে।

এর আগে ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সাফল্যের খবর দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের গবেষকরা এবং একই সাথে তারা চিকিৎসার জন্য নতুন কিছু ধারণাও নিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, এখন থেকে ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরো শরীরের জন্য ওষুধ না দিয়ে শুধুমাত্র আক্রান্ত কোষগুলোর চিকিৎসা সম্ভব। ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইন্সটিটিউট এর একটি দল ত্রিশ ধরনের ক্যান্সার থেকে ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এখানে ওষুধ প্রয়োগ করে প্রায় ছয়শো নতুন ধরনের ঝুঁকি নিরসন করা সম্ভব হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এ মুহূর্তে ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়া হয় এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পুরো শরীরেই কমবেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। গবেষকদের একজন ডা. ফিওনা বেহান। তিনি বলেছেন, এখন যে চিকিৎসা আমরা করছি তা ক্যান্সার রোগীর পুরো শরীরের চিকিৎসা। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে ক্যান্সার কোষগুলোকে চিহ্নিত করছিনা। এ গবেষণায় আমরা ক্যান্সার কোষগুলোর দুর্বলতম স্পটগুলোকে শনাক্ত করেছি এবং এটি আমাদের ওষুধ তৈরিতে সহায়তা করছে। এগুলো শুধু ক্যান্সার কোষগুলোরই চিকিৎসা দেবে এবং ভালো কোষগুলোকে অক্ষত রাখবে।

ক্যান্সার এমন এক রোগ, যেটার পরিণতি সম্পর্কে আমাদের সবার জানা। তবু চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কার আমাদের আশান্বিত করে। আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আবার আধুনিক বিশ্ব সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে মহান একটি উদ্দেশ্য নিয়ে। মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা তারা প্রদর্শন করছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ যখন অন্ধকার দেখছে, তখন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নিয়ে এলেন প্রতিষেধক টিকা। এখনো করোনা বিদ্যমান। কিন্তু জনমনে সেই ভীতি এখন নেই। তাঁরা ভাবছেন, তাঁরা অনেকটা মুক্ত। কেননা, তাঁরা টিকা গ্রহণ করেছেন। বুস্টার ডোজও। এই যে চিকিৎসা শাস্ত্রে অগ্রগতি, সেটা অভাবনীয়। তেমনি ক্যান্সারের মতো জটিল কঠিন রোগের মোকাবেলায় টিকা আবিষ্কারের বার্তা আমাদের সবাইকে প্রাণিত করছে। আমরা বিজ্ঞানীদের সাফল্য কামনা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে