বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে কেন সরকার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না, তার উত্তর তার কাছে স্পষ্ট। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারটা… এটা সম্পূর্ণভাবে এখন যেভাবে আছে, তাতে করে এটা স্পষ্ট যে– তারা (সরকার) বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়। চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার মানে কী? হত্যা করা। বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনগুলোতে প্রধান প্রতিপক্ষের প্রধান নেত্রী যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা… ’১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বেই কিন্তু তারা (সরকার) তাকে (খালেদা জিয়া) মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে নিয়েছে। আজকে কিন্তু একইভাবে যেহেতু সামনে নির্বাচন আছে, দেশনেত্রী যাতে বাইরে যেতে না পারেন এবং সুচিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে দেশে এসে আবার তিনি জনগণকে সঙ্গে চলাফেরা করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে তারা তাকে এভাবে হত্যা করতে চায়।
গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন খালেদা জিয়া। দুই মাসের মাথায় সোমবার সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে তার শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ড। বোর্ডের পক্ষে অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেছিলেন, ম্যাডামের পেটে পানি জমছে, ফুসফুসে সংক্রামণ, পেটে অল্প অল্প রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এবার হাসপাতালে ভর্তির পর উনাকে চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। বাস্তব অবস্থা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন। আমাদের এই মেডিকেল বোর্ড এবং এর সাথে চিকিৎসা সম্পৃক্ত সবাই ২৪ ঘণ্টা উনাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে এর মধ্যে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমি মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতভাবে আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাতে চাই যে, এখনো সময় আছে, যদি বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে নিয়ে উনার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়; সম্ভবত এখনো আমাদের হাতে অপশন আছে যে, আমরা হয়ত উনার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারব।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে বুধবার ফখরুল বলেন, আমরা আপনাদের জানিয়েছি, সকল গণতান্ত্রিক বিশ্বকে জানিয়েছি। তার মুক্তির জন্য আমরা একটার পর একটা কর্মসূচি দিচ্ছি। আপনাদেরকে একটা জিনিস অনুধাবন করতে হবে, আমাদের দল একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনে বিশ্বাসী, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। এটি একটি ফ্যাসিবাদী সরকার। লড়াইটা কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই, গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই।
গত ৯ অক্টোবরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকে রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফখরুল। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকারপ্রধান ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা এসেছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ বিষয়ে সরকার প্রচলিত আইনের অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণের অসুস্থ প্রয়াস চালাচ্ছে বলে বৈঠকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে ৩ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি রয়েছে। অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।