চিকিৎসক-পুলিশ পাল্টাপাল্টি বিবৃতি

| মঙ্গলবার , ২০ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর লকডাউনের মধ্যে এক চিকিৎসকের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার তর্কাতর্কি দুই পেশাজীবী সংগঠনের পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে গড়িয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্তা ও হয়রানির অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ। অন্যদিকে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
মহামারীর রাশ টানতে গত ১৪ এপ্রিল সরকার জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর পুলিশ জরুরি প্রয়োজনে কারও বের হতে মুভমেন্ট পাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
এরপর ওই মুভমেন্ট পাস দেখার নামে পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ আসতে থাকে চিকিৎসকদের কাছ থেকে, যদিও জরুরি সেবায় রত চিকিৎসকদের পরিচয়পত্রই তাদের পাস বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর মধ্যেই রোববার এলিফ্যান্ট রোডে পুলিশের তল্লাশিতে আটকা পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক। তখন তার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার তর্কাতর্কির একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সোমবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি আসে।
সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চায় চিকিৎসকরা: এদিকে বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বিবৃতিতে এলিফ্যান্ট রোডের ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত এবং বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, নিজ গাড়িতে কর্মরত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগানো এবং নিজের নামাঙ্কিত চিকিৎসক গাউন পরিহিত অবস্থায় পরিচয় দেওয়ার পরেও তাকে আক্রমণাত্মকভাবে জেরা করে উত্যক্ত ও হেনস্তা করার দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। চিকিৎসকের এতগুলো পরিচয় দেওয়ার পরও কেবলমাত্র মুভমেন্ট পাস ও প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ডের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ওই ঘটনার খবর ও আংশিক ভিডিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে বলে তার ভিত্তিতে ওই চিকিৎসক সাঈদা শওকত জেনিকে দোষ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করছে বিএমএ।
ডা. সাঈদাকে ‘হেনস্তার’ প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, স্বাচিপের বিএসএমএমইউ শাখাও।
ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চায় পুলিশ: অপরদিকে বিবৃতিতে ডা. সাঈদা শওকতের আচরণের নিন্দা জানিয়ে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, তারা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন।
সভাপতি শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি আদেশ বাস্তাবায়নের চলমান কার্যক্রমের সময় গত রোববার জনৈক চিকিৎসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, যা একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তিনি শুধু ওই পুলিশ সদস্যদের অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকেই কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। শুধু তাই নয় নিজ পেশার পরিচয় বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ঔদ্ধতাপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং জাতির সামনে পেশাজীবী সংগঠগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছেন।
ওই চিকিৎসকের আচরণে পুলিশ বাহিনী মর্মাহত হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, নিজ মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লংঘন এবং কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিকট উক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জোর দাবি জানাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাতের আঁধারে বিষ ঢেলে পুকুর ভর্তি মাছ নিধন
পরবর্তী নিবন্ধঈদের আগেই পাওয়া যাবে উপবৃত্তির টাকা