পরিবহন সংকটে চালের পাইকারি বাজারে ক্রেতার দেখা মিলছে না। ফলে চালের বাজারে স্বাভাবিক বেচাবিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া বেড়েছে পরিবহন ব্যয়ও। করোনাকালীন লকডাউনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতা আসতে পারছেন না। অন্যদিকে এসব অঞ্চলে চাল পাঠাতে হলে আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি খরচ পড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বর্তমানে কৃষকের ঘরে নতুন বোরো ধান ওঠার প্রভাবে চালের দাম নিম্নমুখী। বর্তমানে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। এছাড়া ধানের দাম মণে কমেছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাকালীন ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। পণ্য পরিবহন লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হলেও ব্যবসায়ীরা বাজারে আসতে পারছে না। এর ফলশ্রুতিতে লেনদেনে ধস নেমেছে। নগরীর দুই বৃহৎ পাইকারি চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বোরো ধান ওঠার প্রভাবে বাজার ৫০ কেজি ওজনের সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। ধানের সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমার সম্ভাবনা আছে। চট্টগ্রামের বাজারে জিরাশাইল সিদ্ধ, নাজিরশাইল সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ, মিনিকেট আতপ, কাটারিভোগ সিদ্ধ, কাটারিভোগ আতপ, বেতি আতপ, পাইজাম সিদ্ধ মোটা সিদ্ধ চালের বেশিরভাগ যোগান আসে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং কিশোরগঞ্জের আশুগঞ্জ থেকে।
চালের আড়তদাররা জানান, লকডাউনে বাজারে ক্রেতা নেই। এছাড়া নতুন ধান আসায় বাজার নিম্নমুখী। গত তিন চারদিনের ব্যবধানে সব ধরনের দেশি চালের দাম কমে গেছে। বর্তমানে ভারতীয় নাজিরশাইল সিদ্ধ প্রতি বস্তায় ২০০ টাকা কমে গিয়ে এখন ২ হাজার ৭০০ টাকায়। এছাড়া দেশি নাজিরশাইল সিদ্ধের দাম ১০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। অন্যদিকে পাইজাম সিদ্ধের দাম বস্তায় ১০০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৩০ টাকা। পাইজাম আতপের দাম ১০০ টাকা কমে ২ হাজার ৬০০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ বস্তায় ১০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা এবং মোটা সিদ্ধ ১০০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৯৫০ টাকায়। মিনিকেট সিদ্ধ ১৫০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকা এবং মিনিকেট আতপ বস্তায় ১৫০ টাকা কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ বলেন, লকডাউন শুরুর পর থেকে চালের বাজারে বেচাবিক্রি অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে ক্রেতারা বাজারে আসতে পারছে না। এছাড়া পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ী কর্মচারীদের বেতন ও ঈদ বোনাস দেয়া নিয়ে চিন্তায় আছেন। চাক্তাইয়ে এখন আগের মতো শ্রমিকদের ব্যস্ততা নেই। অন্যদিকে কৃষকের ঘরে এখন নতুন বোরো ধান উঠছে। তাই ধানের দামও পড়তির দিকে। মোটা ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে এখন ৮৫০ টাকায়। গত দুই মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ১১শ টাকায়।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে বেচাকেনার অবস্থা খারাপ। ক্রেতা নেই। দোকানের খরচ উঠাতেও ব্যবসায়ীদের কষ্ট হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম আজাদীকে বলেন, নতুন ধান আসায় বাজার পড়তির দিকে। বর্তমানে চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।