নগরের কাজীর দেউড়ি মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় চারটি মামলা হয়েছে। গত সোমবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ ১২১ জনকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরো ৪০০/৫০০ জনকে। এজাহারভুক্ত ২৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করে গতকাল মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে এবং ওইদিন রাতে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। জানা গেছে, দায়ের হওয়া মামলার মধ্যে কোতোয়ালী থানা পুলিশ তিনটিতে এবং জেলা পুলিশ একটি মামলার বাদী হয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দণ্ডবিধি, সন্ত্রাস বিরোধী আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
এর মধ্যে সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলায় ৯৬ জনের জনের নাম উল্লেখ করে ৪০০/৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এছাড়া সার্জেন্ট চয়ন নাইড়ু বাদী হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ২০০/২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার বাদী মীরসরাই থানার এসআই মোহাম্মদ আল আমিন। এতে ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, কোর্ট বিল্ডিং থেকে মীরসরাই যাওয়ার সময় গাড়িতে হামলা করে। এতে চার পুলিশ আহত হয়। এ মামলায় ২১ নম্বর আসামি করা হয় গোলাম আকবর খোন্দকারকে। তবে মামলার আসামি হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত ১০/১২ দিন ধরে আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। এরমধ্যে চট্টগ্রামে একদিনও যাইনি। এরপরও মামলার আসামি হলাম। এদিকে মামলায় সাইফুল নামে ছাত্রদলের পঙ্গু এক কর্মীকে আসামি করা হয়। সে মিছিলে ছিল না দাবি করে তার পরিবার।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যারিকেড দিয়ে লাঠিচার্জ করে। আমরা গণতান্ত্রিক যে আন্দোলন করছি সেটা যেন স্লো হয়ে যায় সে লক্ষ্যে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তা না হলে অনুমতি থাকার পরও মিছিল করতে বাধা দিবে কেন।
ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ বাসায় তল্লাশি চালিয়েছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, মামলা হলেও সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া ঘরে প্রবেশ করা যাবে না। তাছাড়া বাসায় মহিলা থাকে। রাতে অভিযান চালানোর সময় কোনো মহিলা ফোর্সও ছিল না। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ছিল নগর বিএনপির। নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহম্মদ সড়কে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ৩টার দিকে কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে নগর যুবদলের একটি মিছিল সমাবেশের উদ্দেশে রাওয়ানা হয়। মোড় পার হয়ে সামান্য আসতেই খোয়াজা হোটেলের সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে মিছিলটি। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। বাধা পেরিয়ে মিছিলের অগ্রভাগ চলে গেলেও পেছনে যারা ছিলেন তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় পুলিশের। এর জের ধরেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। ভাঙচুর করে সিসিটিভি, পুলিশ সার্ভিস সেন্টার এবং আশেপাশের বিভিন্ন দোকানপাট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে লাঠিচার্জ, ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে পুলিশ।
এঘটনা চারটি মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দণ্ডবিধি, সন্ত্রাস বিরোধী আইন এবং বিস্ফোরক আইনে সোমবার গভীর রাতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। এর মধ্যে জেলা পুলিশ একটি এবং কোতোয়ালী থানা পুলিশ বাদী হয়ে তিন মামলা করেছে।
যাদের কারাগারে প্রেরণ করা হল : কারাগারে পাঠনো ২৪ জনের মধ্যে ৬ জনকে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩/৪/৬ ধারার দুইটি মামলায় (নং ২৬ ও ২৭) গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরা হচ্ছেন –হাজী ওসমান গনি, আবদুল জলিল, ইয়াছিন, মো. খালেক, তানভীর, মো. ও সাকিব। এছাড়া বাকিদের সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে দায়ের হওয়া মামলায় (নং ২৮) গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরা হচ্ছেন – অলি আহাম্মদ, মো. সোহেল, মো. শাকিল, মো. আরিফ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. নুর খান, মো. সোহেল, মো. আব্দুল হালিম, মো. খোকন, মো. হানিফ, মোহাম্মদ তাহের জামাল, মো. সেলিম, মো. নুর উদ্দিন শরীফ দিদার, মো. আবু তালেব শাকিব, আতাউল হক অপু, মিজানুর রহমান ও নুরুল আলম।