চার দশকে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার টন প্রবাল

সেন্টমার্টিন রক্ষায় পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ জরুরি ।। বদির সেমিনারে তথ্য

কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

জীববৈচিত্র্যের আধার হিসেবে বিবেচিত দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রবালগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। গত চার দশকে এ দ্বীপ উপকূল থেকে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার টন প্রবাল ও পাথর। ফলে ক্ষয়ের শিকার হয়ে উপকূলের বিস্তীর্ণ ভূমি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে দ্বীপের উত্তর উপকূলে সৃষ্টি হয়েছে ভাঙনের। মনুষ্যঘটিত বেশ কয়েকটি অভ্যাসের কারণে দ্বীপটি পরিবেশগত ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয়েছে। অবিলম্বে এ দ্বীপে পরিবেশগত পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
গতকাল শনিবার কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বুরি) বিজ্ঞানীদের ২০২০-২১ অর্থবছরে সম্পাদিত গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের ওপর আয়োজিত সেমিনারে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) অধ্যাপক ড. মো. কাউসার আহাম্মদ। প্রধান অতিথি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশ ও পর্যটনের উন্নয়নের মাধ্যমেই সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে। যদি আমাদের প্রাকৃতিক রিসোর্স বা সম্পদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে উন্নয়ন কখনও টেকসই হবে না। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে সরকার বদ্ধ পরিকর। সেমিনারে ‘প্রবাল ও সেন্টসার্টিন দ্বীপ’ শীর্ষক মূল গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর (অতিরিক্ত সচিব)। তিনি নব্বই দশকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে তার গবেষণা ও বর্তমান গবেষণার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেন, মনুষ্যঘটিত বেশ কয়েকটি প্রভাবে দ্বীপটি যেভাবে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে এবং অবিলম্বে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশগত পুনরুদ্ধারের জন্য বুরি বিজ্ঞানীরা কয়েকটি প্রজাতি চিহ্নিত করেছেন এবং যার মাধ্যমে সেন্টমার্টিনে দ্বীপে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল রিফ গড়ে তোলার কৌশলও অর্জন করেছেন বলে জানান মহাপরিচালক বেলাল হায়দার। তিনি দ্বীপে পরিবেশগত বিপর্যয়ের জন্য প্রবাল মরে যাওয়া, আহরণের কারণে উপকূল থেকে প্রবাল ও পাথর হারিয়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা, প্লাস্টিক ও অন্যান্য দূষণ, ক্ষতিকর পদ্ধতিতে মাছ ধরা, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও বড় বড় জাহাজ চলাচলসহ মনুষ্যঘটিত অন্যান্য কারণেই এ দ্বীপের প্রবালগুলোর রোগাক্রান্ত হওয়া ও মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ অর্থবছরের গবেষণা ফলাফলসহ মোট ৭টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এ সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক গবেষক উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় আরো অংশ নেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাকাল্টি অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ ডীন প্রফেসর ডা. মো. রাশেদ-উন-নবী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. সাখাওয়াত হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব আর্থ এন্ড ওশান সাইন্সের ডীন কমডোর এস জসীম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা। সেমিনারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅর্জন তাইজুলের দুই উইকেট ৯৯তম খেলোয়াড় হিসেবে জয়ের অভিষেক
পরবর্তী নিবন্ধওমিক্রনে আছে সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্যও