ওমিক্রনে আছে সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্যও

আতঙ্কিত না হয়ে প্রস্তুত থাকা উচিত : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সম্ভবত সাধারণ ঠান্ডার জন্য দায়ী অন্য একটি ভাইরাসের জেনেটিক উপাদানের অংশকে সঙ্গে নিয়ে অন্তত একবার নিজের জিন বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। কোনো দেহের আক্রান্ত কোষে দুটি ভাইরাসের সংমিশ্রণের ফলে এটা হতে পারে, বলছেন তারা। গবেষকদের ভাষ্য, ওমিক্রনের যে জেনেটিক বিন্যাস, তা করোনাভাইরাস নামে পরিচিতি সার্স-সিওভি-২-র আগের সংস্করণগুলোতে দেখা যায়নি। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্য অন্য অনেক ভাইরাসেই দেখা যায়, যেসব ভাইরাসের কারণে সাধারণ ঠাণ্ডা জ্বর দেখা যায়।
এদিকে ওমিক্রন নিয়ে বিশ্বের আতঙ্কিত না হয়ে প্রস্তুত থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। এক বছর আগের তুলনায় পরিস্থিতি এখন পুরোপুরিই ভিন্ন। শুক্রবার এক সম্মেলনে তিনি এমনটাই বলেছেন। খবর বিডিনিউজের। সুনির্দিষ্ট এই জেনেটিক উপাদান নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে ওমিক্রন সম্ভবত নিজেকে আরও বেশি মানুষের উপযোগী করে গড়ে তুলেছে, যা তাকে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফাঁকি দিতেও সাহায্য করছে, বলেছেন ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক ডাটা অ্যানালেটিক্স ফার্মের ভেঙ্কি সৌনদরারাজন। বৃহস্পতিবার ওয়েবসাইট ওএসএফ প্রিপ্রিন্টসে প্রকাশিত গবেষণায়ও তিনিই নেতৃত্বে ছিলেন।
জিন বিন্যাসে সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য থাকার ফলেই হয়তো ওমিক্রন মৃদু উপসর্গ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপসর্গ ছাড়াই সহজে ছড়াতে পারছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা অবশ্য এখনও ওমিক্রন অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় বেশি সংক্রামক কিনা, এর আক্রমণ অনেক বেশি তীব্র কিনা কিংবা এটি ডেল্টাকে টপকে বিশ্বজুড়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম কিনা তা জানেন না। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আরও কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
আগের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুস এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমের কোষ একইসঙ্গে সার্স-সিওভি-২ ও সাধারণ ঠাণ্ডা করোনাভাইরাসকে আশ্রয় দিতে পারে। এ ধরনের কোনো ক্ষেত্রে একই হোস্ট কোষে দুটি ভাইরাসের সংমিশ্রণ ঘটতে পারে এবং নতুনটির একাধিক কপি তৈরি করতে পারে, যেগুলোর জিন বিন্যাসে আগের দুই ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান থাকে।
সৌনদররারাজন এবং তার সহকর্মীদের গবেষণা বলছে, সম্ভবত দুই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির দেহে সার্স-সিওভি-২-র কোনো সংস্করণ অন্য ভাইরাসের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছে। সৌনদরারাজনের এই গবেষণা এখনও অন্য গবেষকদের দ্বারা যাচাই বা পিয়ার রিভিউড হয়নি।
ওমিক্রনের মতো একই জেনেটিক বিন্যাস ঠাণ্ডার জন্য দায়ী এইচসিওভি-২২৯ই নামে পরিচিত করোনাভাইরাস এবং এইডসের জন্য দায়ী হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাসে (এইচআইভি) অনেকবারই দেখা যায়, বলেছেন সৌনদরারাজন। ওমিক্রন যেখানে প্রথম শনাক্ত হয়েছে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় এইচআইভির হার সবচেয়ে বেশি। এই এইচআইভি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাস ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
ওমিক্রনের মিউটেশনের উৎস, ক্ষতিকর প্রভাব ও সংক্রামক ক্ষমতা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। সামপ্রতিক এই ভ্যারিয়েন্টটি সম্ভবত কোনো প্রাণীদেহের কোষে রূপ বদলেছে, এ রকম একটি ধারণাও আছে। তবে গবেষণার ফল আসা পর্যন্ত এখন যেসব কোভিড-১৯ এর টিকা আছে সেগুলো নেওয়া জরুরি, বলছেন সৌনদরারাজন।
আতঙ্কিত হওয়া যাবে না : ওমিক্রন নিয়ে বিশ্বের আতঙ্কিত না হয়ে প্রস্তুত থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। রয়টার্স নেক্সট সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ওমিক্রনকে ‘অতি সংক্রামক’ অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ভ্যারিয়েন্টটি সম্ভবত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের অন্য সব ভ্যারিয়েন্টকে হটিয়ে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে, যদিও এই বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।
বিশ্বজুড়ে এখন করোনায় আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশের দেহেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মিলছে, জানিয়েছেন তিনি। নভেম্বরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর মাত্র অল্প ক’দিনেই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি মিলেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে। ভারতেও দুজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার দশকে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার টন প্রবাল
পরবর্তী নিবন্ধমৃত্যু বাড়লেও রোগী শনাক্ত কমেছে