বান্দরবানের রুমায় গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নে জাদুটোনায় মৃত্যুর গুজবে পাড়াবাসী চার ছেলেসহ কার্বারিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম পাহাড়ি জনপদে ঘটনাটি সংঘটিত হলেও জানাজানি হয়েছে প্রায় তের ঘণ্টা পর গতকাল শুক্রবার সকালে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে রহস্য রয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান, রুমা উপজেলার গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম আবুপাড়া এলাকায় কুসংস্কারকে কেন্দ্র করে তাবিজ-কবচ করে পাড়াবাসীদের হত্যার অভিযোগ ওঠে বোমাং সার্কেলের পাড়া প্রধান কার্বারির পরিবারের বিরুদ্ধে। বান-জাদুটোনায় পাড়াবাসীদের মারা হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পাড়ার অন্যরা। বৃহস্পতিবার রাতে দশটার দিকে পাড়াবাসী বৈঠক করে কার্বারির পরিবারের ওপর হামলা চালায়। এতে পাড়া প্রধান কার্বারিসহ তার পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, বোমাং সার্কেলের আবুপাড়া কার্বারি (পাড়া প্রধান) লরুই ম্রো। অন্যরা হচ্ছেন, কার্বারির ছেলে রুমথুই ম্রো, লেংঙিন ম্রো, মেন ওয়াই ম্রো ও রিংরাও ম্রো।
খবর পেয়ে রুমা জোনের সেনাবাহিনী, পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটি নিশ্চিত করে গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বোমাং সার্কেলের মৌজা হেডম্যান মেনরথ ম্রো জানান, পাড়াবাসীর অভিযোগ পাড়ার প্রধান কার্বারির পরিবার পাড়ার লোকজনের ওপর জাদুটোনা করছিল। আর তাদের জাদুটোনা ও তাবিজ-কবচে পাড়ার লোকজন মারা যাচ্ছে- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে পাড়ায়। এতে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী পাড়া প্রধানের পরিবারের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পাড়া প্রধান কার্বারিসহ তার ৪ ছেলেকে হত্যা করেছে।
স্থানীয় কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাড়া কার্বারির পরিবারের বিরুদ্ধে পাড়ার লোকজনকে তাবিজ-কবচ করে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠেছে। কার্বারি পরিবারের জাদুটোনার কারণে পাড়ার লোকজন মারা যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া সম্প্রতি জুম চাষ নিয়েও কার্বারির পরিবারের সাথে পাড়াবাসীর বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ নিয়ে পাড়াবাসী বৈঠক করে কার্বারির পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পিছনে আরও রহস্য থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরীন আখতার বলেন, ‘কার্বারিসহ ৫ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। দুর্গম এলাকা হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা জেনেছি শুক্রবার সকালে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশের দুটি টিম পাঠানো হয়েছে। কার্বারির পরিবারের সাথে পাড়াবাসীর বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন মারা গেছে জেনেছি।’
