চট্টগ্রাম টেস্টের নায়ক যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হয় চট্টগ্রামের দুই ক্রিকেটারকে। অন্তত টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে তেমনটি বলতে হবে। কারণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনের নায়ক ছিলেন চট্টগ্রামের তরুণ নাঈম হাসান। বল হাতে চট্টগ্রামের এই তরুণ তুলে নিয়েছেন ৬ উইকেট। যা তার ক্যারিয়ার সেরা। টানা ১১ ঘণ্টা ফিল্ডিং করার পর বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতেই ব্যাট হাতে নামতে হয় চট্টগ্রামের আরেক সন্তানকে। তিনি তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। লম্বা সময় ফিল্ডিং এর ক্লান্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তামিম ঝড় তুলতে থাকেন ব্যাট হাতে। এ যেন ঠিক ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো’ গানের মত। ক্লান্তি কাবু করতে পারেনি তামিমকে। ইনিংসের শুরু থেকেই খেলেছেন বীরদর্পে। মূলত চাটগাঁইয়ারাই মাতাচ্ছে চট্টগ্রাম টেস্ট।
টেস্টের দ্বিতীয় দিনে তামিম অপরাজিত ছিলেন ৩৫ রানে। গতকাল তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই আরও আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তামিম। খেলেছেন একেবারে স্বভাবসুলভ। প্রতিপক্ষ বোলারদের কোন ধরনের সুযোগ না দিয়ে এগিয়ে চলেছেন তামিম দারুণ এক মাইলফলকের দিকে। তামিম যখন টেস্টের দ্বিতীয় দিন বিকেলে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করতে নামছিলেন তখন তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছিল ৬৫ টেস্টে ৪৮৪৮ রান। সাথে ৯টি সেঞ্চুরি। টেস্টের তৃতীয় দিন সকালে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন। এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে। শেষ পর্যন্ত সেটাও তুলে নেন তামিম। ক্যারিয়ারের দশম এবং নিজ ভেন্যু চট্টগ্রামে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি তুলে নেন তামিম। সবশেষ ২০১৪ সালে নিজের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম। আর সেটিই ছিল এতোদিন নিজের মাঠে একমাত্র সেঞ্চুরি। সেদিন ১০৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। তবে গতকাল সে ইনিংসটাকে ছাড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। সেঞ্চুরি পূরণ করার পর তামিম এগুতে থাকেন ৫ হাজার রানের মাইল ফলকের দিকে। একেবারে কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। আর মাত্র ১৯ রান হলেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে সবার আগে ৫ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করবেন।
কিন্তু তৃতীয় দিনের চা বিরতিতে যাওয়ার আগেই পায়ে আঘাত পান তামিম । ফলে চা বিরতির পর আর মাঠে নামতে পারেননি। ১৩৩ রান নিয়ে তিনি আছেন অবসরে। অবশ্য এখনো তার ব্যাট করার সুযোগ রয়েছে। আবার মাঠে ফিরেই তামিম অতিক্রম করবেন তার ৫ হাজার রানের মাইল ফলক সেটাই বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের প্রত্যাশা। গতকালের তামিমের ১৩৩ রানের ইনিংসটি এখন তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। সবার উপরে অবশ্য ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে করা ২০৬ রানের ইনিংসটি। এর পরে রয়েছে ২০১০ সালে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে খেলা ১৫১ রানের ইনিংসটি। তামিমের এখনো সুযোগ রয়েছে নিজ মাঠের ইনিংসটাকে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে আসার। গতকাল তামিম ১৩৩ রানের ইনিংসটি খেলেছেন ২১৭ বলে ১৫টি চারের সাহায্যে। এখন দেখার বিষয় আজ যদি আবার ব্যাট হাতে নামেন তামিম তখন কোথায় নিয়ে যান নিজের ইনিংসটাকে।
এদিকে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন চট্টগ্রামের তরুণ নাঈম হাসান। তিনি ক্যারিয়ার সেরা ১০৫ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট। দীর্ঘ ১৫ মাস পর মেহেদী হাসান মিরাজের পরিবর্তে টেস্ট ক্রিকেটে খেলতে নামা নাঈম সুযোগটাকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। আর নাঈমকে অনুসরণ করে তামিমও টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। চট্টগ্রাম টেস্টে তিনদিন শেষ হয়ে গেছে গতকাল। আর এই তিন দিনে নায়ক হচ্ছে চট্টগ্রামের দুই ক্রিকেটার তামিম ইকবাল এবং নাঈম হাসান। এখন সামনের দুই দিনে চট্টগ্রামের এই দুই ক্রিকেটার কি করেন সেটাই এখন দখার অপেক্ষা।