চাক্তাই খালের বেশিরভাগ অংশ এখনো ভরাট

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী নগরের চকবাজার, দেওয়ান বাজার, জামালখান, স্টেডিয়াম এলাকা, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই খাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মাস্টার প্ল্যানের নির্দেশিত এলাকাগুলো ছাড়াও আশেপাশের স্থান জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে প্রয়োজন চাক্তাই খাল পরিষ্কার রাখা। অথচ বর্ষা ঘনিয়ে এলেও খালটির বেশিরভাগ অংশ ভরাট দেখা গেছে।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় সিডিএর মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পটির আওতাভুক্ত ৩৬ খালের একটি চাক্তাই খাল। বর্তমানে খালটির রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কাজের সুবিধার্থে বহদ্দারহাট, দেওয়ান বাজার ও ফুলতলা এলাকায় খালের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানি নিষ্কাশন। কোথাও এক পাশে পানি যাওয়ার জন্য সরু পথ রাখা হয়েছে। তবে সেখানেও প্রায় ভরাট হয়ে আছে।
এদিকে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে খালটির বিভিন্ন পয়েন্টে ভরাট দেখা গেছে। সেখানে বাসা-বাড়ির গৃহস্থালি বর্জ্য, ঝুট কাপড়, পলিথিন, মাটির স্তূপ দেখা গেছে। খালের বিভিন্ন অংশে গুল্মলতা, ঘাস উঠেছে। এমনকি কলাগাছও দেখা গেছে খালের মাঝখানে। চকবাজার ধুনির পোল এলাকায় ভরাট ছিল খাল। দেওয়ান বাজার ব্রিজ এলাকায় দেখা গেছে খালের এক পাশে বাঁধ। ব্রিজের নিচেও ছিল মাটির স্তূপ। দেওয়ান বাজার সিঅ্যান্ডবি জাজেস কমপ্লেঙ থেকে দক্ষিণ পাশে মাস্টারপুল পর্যন্ত প্রায় পুরোটা ভরাট ছিল। ভরাট হয়ে যাওয়ায় দেওয়ান বাজার ভরা পুকুর পাড় এলাকায় দূর থেকে মনে হবে রাস্তার সাথে খাল প্রায় মিশে গেছে। অবশ্য কিছু জায়গায় পরিষ্কার ছিল। তবে সেখানে খাল থেকে উত্তোলনকৃত ময়লা-আর্বজনা খালের সাথে লাগোয়া রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। এতে বৃষ্টি হলে আবর্জনাগুলো আবার খালেই পড়বে। এ দৃশ্য দেখা গেছে ফুলতলা ব্রিজ এলাকায়।
১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া রসুলবাগ আবাসিক এলাকার খালপাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চাক্তাই ডাইভারশন খাল সংস্কারের দাবিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন করেছে পশ্চিম বাকলিয়া ১৭ নং ওয়ার্ডের রসুলবাগ আবাসিক এলাকা সমাজ কল্যাণ পরিষদ।
মোজাম্মেল নামে বাকলিয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হচ্ছে শুষ্ক মৌসুম। এ সময়ের মধ্যেই খাল পরিষ্কার করে ফেলা উচিত। কিন্তু এখন এপ্রিল শুরু হলেও খাল পরিষ্কার হয়নি। তারা এখনই খাল পরিষ্কারের দাবি জানান।
১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শহিদুল আলম আজাদীকে বলেন, খাল থেকে মাটি উত্তোলনের কোনো বিকল্প নাই। আমাদের এখানে কিন্তু আগাম বর্ষা চলে আসে। তাই এখন থেকে মাটি উত্তোলন করতে হবে। যদি গতবারের ন্যায় এবারও ভারী বর্ষণ হয় তাহলে মাটি না তুললে সংকট আরো তীব্র হবে। তিনি বলেন, চাক্তাই খালের ফুলতলা ও সাবএরিয়ার মুখে দুটি রিজার্ভার আছে। সেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। সিডিএর মেগা প্রকল্পের জন্য খালের যেসব স্থানে বাঁধ দেয়া আছে সেগুলো বর্ষার আগে সরিয়ে নেয়া উচিত।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন আজাদীকে বলেন, চাক্তাই খাল আগের মতোই ভরাট হয়ে আছে। দেওয়ান বাজারের দিকে অবস্থা খারাপ। শুটকিপট্টি থেকে মধ্যম চাক্তাই পর্যন্ত রিটেইনিং ওয়ালের কাজ চলছে। সেখানেও বাঁধ আছে। বর্ষার আগে পানি চলাচলের ব্যবস্থা না করলে মানুষ কষ্ট পাবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, চাক্তাই খাল নিয়ে এবার তেমন টেনশন করতে হবে না। এখানে আমাদের কাজ চলমান আছে। যেখানে কাজ চলছে সেখানে পানি যাওয়ার মতো ব্যবস্থা আছে। পুরো এপ্রিল মাস কাজ করব। যেখানে কাজ শেষ হবে সেখানে মাটি তুলে ফেলব। বাঁধ যেখানে সেখানে আমাদের স্কেভেটর রাখা আছে। কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে তুলে মাটি ফেলতে পারব।
প্রসঙ্গত, জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সাল থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে চাক্তাই খাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধ৫ কোটি টাকার এনজিওগ্রাম মেশিনের সেবা বন্ধ ৭ মাস