চাকরির প্রলোভনে গৃহবধূ গণধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে স্বামীর অসুস্থতার সুযোগে চাকরির প্রলোভনে ডেকে নিয়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও সেই ঘটনা ভিডিও ধারণ করে টাকা দাবির মামলায় জোবায়ের হোসেন রিফাত(২৮) নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে আকবর শাহ এলাকা থেকে রিফাতকে গ্রেপ্তারের পরদিন মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে আজাদীকে জানান আকবর শাহ থানার ওসি মো. জহির হোসেন।
অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেন্টু আজাদীকে বলেন, ভুক্তভোগী নারীর করা মামলায় আদালত গত ৬ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিলেন। ওয়ারেন্টের আসামিদের মধ্যে একজন জোবায়ের হোসেন রিফাত।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী হাসনাত(ছদ্মনাম) আজাদীকে বলেন, আমাদের এখন একটাই দাবি সব আসামি গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদানের পাশাপাশি সেই ভিডিও ফুটেজটি উদ্ধার করে দেয়া। আমরা পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই। কিন্তু আসামিরা বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নিতে আমাদের চাপ দিচ্ছে। আমার স্ত্রীর ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ারও হুমকি দিয়ে আসছে আসামিরা।
গত ১৮ মার্চ আকবর শাহ থানা এলাকার ভুক্তভোগী এক নারী রিফাতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু ট্রাইবুন্যাল-৪ এ একটি মামলা করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার আসামিরা হল- সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী জাহানাবাদ এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে নুরুল আলম(৪৮), কর্ণেলহাট সিডিএ আবাসিকের আবুল বশরের ছেলে জোবায়ের হোসেন রিফাত (২৮), একই এলাকার বাসিন্দা সাহেদ শাহারিয়ার(৩২), লালখান বাজার হাইলেভেল রোডের বাসিন্দা আশরাকা আক্তার রেশমী (২৫) ও আকবরশাহ থানাধীন বাগানবাড়ির বেলায়েত হোসেনের ছেলে মো. সাইফুল (৩২)।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০১৯ সালে ১ আগস্ট স্বামীর অসুস্থতায় আর্থিক টানাপোড়নের মধ্যে আসামিদের প্ররোচনায় ভুক্তভোগী ওই নারী ও তার দশ বছর বয়সী এক মেয়েকে ফিরোজ শাহ কলোনীর একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আসামিরা সেখানে তিনটি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক ওই নারীর সাক্ষর নেয়। ওই বছর ৯ আগস্ট ফিরোজ শাহ কলোনীর গ্রীন টাওয়ার নামে সেই ভবনটির বাসায় ওই নারীকে আসামিরা জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। মামলায় ২ নম্বর আসামি রিফাত সেই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। এ সময় বাদীনি চিৎকার করলে তাকে মারধর করেন অন্যান্য আসামিরা।
আরজিতে বলা হয়েছে, এসময় আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর একমাত্র কন্যা সন্তানকে আটকে রেখে মুক্তিপণ ও তাদের কাছে থাকা ধর্ষণের ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে।
পরবর্তীতে বাদীনি এই বিষয়টি তার স্বামীকে জানালে তিনি আসামিদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন।
২০১৯ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আসামিরা টাকা আনতে গেলে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় সাইফুল ও রেশমী নামে দুইজনকে ধরে আকবরশাহ থানায় নিয়ে যায়। বাদীনি অভিযোগ করেন, ওই সময় থানার তৎকালীন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান রাতে আসামিদের ছেড়ে দেয়।
ওই ঘটনার পর বিভিন্ন সময় বাদীনি ও তার কন্যা সন্তানকে জিম্মি করে টাকা দাবি করে। এক পর্যায়ে বাদীনির স্বামী কথিত এক ডিবি কর্মকর্তার মাধ্যমে আসামিদের হাতে সাড়ে ৫ লাখ টাকা তুলে দেয়। এরপর কোনো উপায় না দেখে আইনের আশ্রয় নিতে আদালতের দারস্থ হন ভুক্তভোগী ওই নারী ও তার স্বামী।
মামলার বাদীনি আরজিতে অভিযোগ করেন, মূলত আসামিরা চাকরির প্রলোভন দিয়ে তাকে কৌশলে মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়ানোর চেষ্টা করেছে। যে ভবনে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল সেটা মাদক বেচা-কেনা ও সেবনের জায়গা ছিল বলে বাদীনি আরজিতে উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনানিয়ারচরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা, গোলাগুলিতে নিহত ২
পরবর্তী নিবন্ধমীর হেলালের গাড়িবহরে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের হামলা