চাকরির কথা বলে পাঠান রাশিয়ায়, বাধ্য করেন যুদ্ধে : সিআইডি

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার ১

| শনিবার , ১৪ জুন, ২০২৫ at ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

উচ্চ বেতনে চাকরির কথা বলে রাশিয়ায় পাঠিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার ঢাকার আদালতে হাজির করা হলে তিনি ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ দেন বলে সিআইডি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন মানবপাচার ‘চক্রের হোতা’। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে তারা রাশিয়ায় নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে অন্তত ১১ জনকে যুদ্ধে ‘বাধ্য’ করেছেন।

সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, ৫০ জনের মধ্যে ২৯ জনকে ‘ম্যানপাওয়ার’ হিসেবে নিয়ে গেছেন। বাকি ২১ জনকে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসায় নিয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে ১১ জনকে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেন। ম্যানপাওয়ার হিসেবে নেওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। আর ট্যুরিস্ট ভিসায় ২১ জনকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করানোর জন্য নিয়ে যান। এর মধ্যে ১১ জনকে যুদ্ধে পাঠালেও বাকিরা অন্যান্য কাজে রয়েছেন বলে জবানবন্দিতে বলেছেন আলমগীর। খবর বিডিনিউজের।

আলমগীর থাকেন রাশিয়াতেই। তার স্ত্রীসন্তান রাশিয়ান। এবার কোরবানির ঈদ উদযাপনে লোহাগাড়ায় গ্রামের বাড়িতে স্ত্রীসন্তানদের নিয়ে আসেন। আর বৃহস্পতিবার রাতে দেশ ছাড়ার আগ মুহূর্তে তিনি গ্রেপ্তার হন। তার স্ত্রীসন্তানদের ছেড়ে দেওয়া হয় পরিবারের জিম্মায়।

ওমরাহ করানোর পর বিক্রি করে রাশিয়ায়’

সিআইডি বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, চক্রটির সদস্যরা মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার কিংবা বাবুর্চির কাজের কথা বলে প্রথমে ১০ জনকে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠান। সেখানে ওমরাহর পর রাশিয়ায় ‘সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন’। সুলতান তাদের দাশ হিসেবে রাশিয়ার সৈন্যদের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হয় যুদ্ধে। আর যুদ্ধে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া এলাকার হুমায়ুন কবির নামে একজন নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামে একজনের গুরুতর আহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওমরাহ ভিসায় পাঠানো ১০ জনের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ থানার মো. আকরাম হোসেন ছিলেন। তিনি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি রাশিয়ায় যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আকরামের দেওয়া তথ্যে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী ঝুমু আক্তার ঢাকার বনানী থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলা তদন্তের মধ্যে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নেপালে পালানোর সময় চক্রটির এক সদস্য ফাবিহা জেরিন তামান্না ঢাকার বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন। তামান্না ‘ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের’ অংশীদার বলে জানায় সিআইডি। সংস্থাটি বলছে, রাশিয়ায় পাচারের জন্য আরও ১০ জনকে সৌদি আরবে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ায় যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করার বিষয়টি জানতে পেরে তারা সেখানে যেতে অস্বীকার করেন। এরপর তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে তারা সৌদি আরবেও কোনো কাজ করতে পারছেন না এবং দেশেও ফিরতে পারছেন না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনা-জয়সহ ২২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা