আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারি না। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী হকার উচ্ছেদ করে ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগামী ও তৎপর। কয়েক মাস আগে ২ ফেব্রুয়ারি আমরা এখানে লিখেছিলাম ‘ফুটপাত দখলকারীদের ছাড় দেওয়া যাবে না’। সে হিসেবে চট্টগ্রামের ‘হকারের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত নিউমার্কেট–আমতল থেকে ফলমন্ডি পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বন্দর নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার ঘোষণার আট দিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর ফলমন্ডি লেন, পুরাতন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, নতুন রেলস্টেশন, নিউমার্কেট, জিপিও, তামাকুমন্ডি লেন, আমতলসহ আশপাশের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। দিনভর এ অভিযানে প্রায় এক হাজার ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশকিছু সেমি পাকা দোকান ও অবৈধ স্থাপনা। অভিযানে চসিক, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। মোতায়েন ছিল প্রায় ২০০ পুলিশ, ৩০ জন র্যাব ও আনসারসহ চসিকের বিপুলসংখ্যক কর্মী। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হকাররা আবার আগের মতো গিয়ে ফুটপাত দখল করে নিয়েছে। গত ২৪ মে আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে আশপাশের এলাকায় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে রাখা দুইশরও বেশি হকারকে উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চসিকের একটি টিম অভিযান চালিয়ে হকারদের সরিয়ে দিয়ে নিউমার্কেট থেকে পুরাতন রেলস্টেশন পর্যন্ত এলাকার সড়ক–ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে। অভিযানে র্যাব–পুলিশের সদস্যরাও অংশ নেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন থেকে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। একইসঙ্গে নিউমার্কেট মোড় থেকে দক্ষিণ বরাবর সদরঘাট কালিমন্দির পর্যন্ত অমরচাঁদ রোডেও অভিযান চালানো হয়। অভিযানে প্রায় দুই শতাধিক অস্থায়ী চৌকি–কাঠের টুলসহ ভ্রাম্যমাণ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সড়ক–ফুটপাত দখলে রাখা হকারদের সরিয়ে তাদের কিছু মালামাল জব্দ করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা বলেন, দুই শতাধিক দোকান আমরা উচ্ছেদ করেছি। পুরাতন রেলস্টেশন থেকে অভিযান শুরু করে মিউনিসিপ্যাল স্কুল পর্যন্ত পৌঁছানোর পর ফেরার পথে দেখি সরিয়ে দেওয়া অনেক হকার বসে গেছেন। তখন আমরা বাধ্য হয়ে তাদের বিক্রির জন্য আনা মালামাল জব্দ করেছি। এ ছাড়া, সদরঘাট কালিমন্দিরের সামনে একটি ভ্রাম্যমাণ কাঁচাবাজার ছিল। সেটিও উচ্ছেদ করা হয়েছে।
ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা ও জঞ্জালমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি সিটি কর্পোরেশন থেকে অনেক বার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতির পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বিগত সিটি নির্বাচনের সময়ও মেয়রসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা ফুটপাত হকারমুক্ত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু মাসের পর মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও ফুটপাত যেমন ছিল তেমনই আছে। যদিও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ভূমিকাকে আমরা প্রশংসা করছি। ফুটপাত মুক্ত হওয়ার পরিবর্তে নতুন করে দখল চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বাইরে পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটতে সাহায্য করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।
সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। তাঁরা বলেন, ফুটপাতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই হবে না। পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে মিনি বাগান করে দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে উচ্ছেদের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা জায়গা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় উচ্ছেদ করেও কাজ হবে না। কেউ কেউ ফুটপাতের পরিবর্তে বিকল্প স্থানে হকারদের বসার জায়গা করে দেয়ার পরামর্শ দেন।
অভিযোগ আছে, ফুটপাত একটি পক্ষের একটি মধুচক্র। এই মধুচক্রে রক্ষিত টাটকা মধুর লোভ সংবরণ করা কঠিন। প্রশাসনের লোকজন এ লোভ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারেন না। ফুটপাত যেহেতু হেঁটে চলাচলের জন্যই। তাই পথচারীদের এই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাওয়া জরুরি। আমরা চাই দখলমুক্ত ফুটপাত। তারজন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে কঠোর ভূমিকা পালন করা হচ্ছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। চালাতে হবে নিয়মিত অভিযান।