চাইলেই মিলছে আইনি সহায়তা

অসহায়দের আশ্রয়স্থল লিগ্যাল এইড

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ মার্চ, ২০২২ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

পাঁচ ভাই পেলেন ৭ রুম করে। তাকে দেওয়া হয় মাত্র দুই রুম। এতে ন্যায্য হিস্যা পাননি বলে অভিযোগ মো. আব্দুল মালেকের। তিনি চান অন্য ভাইদের মতো তাকেও তার প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া হোক। এর মধ্যে তিনি জানতে পারেন লিগ্যাল এইডের কথা, যেখানে বিরোধ আপোষ মীমাংসা হয়। দেরি না করে তিনি ছুটে যান আদালত পাড়ায়।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ৬ তলায় থাকা লিগ্যাল এইড অফিসের কর্মকর্তা মো. এরশাদুল ইসলামের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। একপর্যায়ে পেয়েও যান প্রাথমিক সহায়তা। লিগ্যাল এইড থেকে তার ভাইদের প্রতি ইস্যু করা হয় সমন। আগামী ৮ মে এ বিষয়ে সভা হবে। গত বৃহস্পতিবার মো. আব্দুল মালেকই আজাদীকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, রাঙ্গুনিয়ার মরিয়ম নগর এলাকার মৃত সুফী গুরা মিয়ার ছেলে তিনি। থাকতেন বিদেশে, কিন্তু এক সময় ফিরে আসেন। মরিয়ম নগর এলাকার একটি ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় শিশুদের কোরআন শরীফ শিক্ষা দেন তিনি। তিনি বলেন, ছয় ভাইয়ের জন্য বাড়ি বানানো হয়। অন্য ভাইয়েরা ৭ রুম করে পেয়েছেন। আমাকে দেওয়া হয় মাত্র দুই রুম। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। মাদ্রাসায় পড়িয়ে কোনো রকম চলে সংসার। এর মধ্যে পরিবারের ন্যায্য হিসাব থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যার কারণে লিগ্যাল এইডে আসা। মানুষের কাছেই শুনেছি, বিনা খরচে লিগ্যাল এইডে সহায়তা পাব।
এ বিষয়ে লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা মো. এরশাদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, মো. আব্দুল মালেক তার সমস্যার কথা আমাদের অবহিত করেছেন। আমরা তা রেকর্ডও করেছি। পাশাপাশি তার ভাইদের প্রতি নোটিশ ইস্যু করেছি। আশা রাখছি তিনি তার প্রাপ্যতা পেয়ে যাবেন। লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা আরো বলেন, শুধু মো. আব্দুল মালেক নয়, প্রতিদিন এমন অসহায় অস্বচ্ছল অনেকে আমাদের অফিসে আসেন। যাদেরকে আমরা নানা রকমের আইনী সহায়তা দিয়ে থাকি। বলা যায়, অসহায়, অসচ্ছলদের জন্য লিগ্যাল এইড একটি আশ্রয়স্থলের নাম। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে পারিবারিক, ফৌজদারি, দেওয়ানী বিরোধ মামলায় চট্টগ্রামের লিগ্যাল এইড থেকে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ১ হাজার ৬৩১ জন। এর মধ্যে নারী ৯৮২ জন, পুরুষ ৬২৫ জন ও শিশু ২৪ জন। ২০২০ সালে এমন সহায়তা পেয়েছেন ১ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে ৭১০ জন নারী, পুরুষ ৪৬৫ জন ও শিশু ৫৩ জন। ২০২১ সালে সহায়তা পেয়েছেন ১ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে নারী ৭৬৫ জন, পুরুষ ৪৫৮ জন ও শিশু ৬৬ জন।
এছাড়া ২০১৯ সালে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে দেওয়ানি, পারিবারিক ও ফৌজদারি ঘরনার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮০ টি। এর মধ্যে ১৯৩ টি সফল ও বিফল হয়েছে ৪৮৭ টি। অর্থ আদায় হয়েছে ৭১ লাখ ৬১ হাজার টাকা। ২০২০ সালে এমন বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৮৫ টি। এর মধ্যে সফল নিষ্পত্তি ৯৩ টি ও বিফল হয়েছে ২৯২ টি। অর্থ আদায় হয়েছে ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০২১ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৩৮ টি বিরোধ। এর মধ্যে সফল হয়েছে ১৩৯ টি এবং বিফল হয়েছে ৩৯৯ টি বিরোধ। অর্থ আদায় হয়েছে ৮৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
লিগ্যাল এইড সূত্র জানায়, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি এবং মামলায় সহায়তা ছাড়া নানা বিষয়ে ২০১৯ সালে আইনি পরামর্শ পেয়েছেন চট্টগ্রামের ১৩৬ জন নারী এবং ৪৯ জন পুরুষ। ২০২০ সালে ৫২ জন নারী ও ৩০ জন পুরুষ এবং ২০২১ সালে আইনি পরামর্শ পেয়েছেন ৪০ জন নারী ও ৩৫ জন পুরুষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘চট্টগ্রামের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই’
পরবর্তী নিবন্ধইতিহাস বিকৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে : খসরু