চসিকের সাধারণ সভায় সিডিএর বিরুদ্ধে ক্ষোভ

আজাদী প্রতিবেদন

রমজান মাসে শহরকে যানজটমুক্ত রাখার ওপর জোর মেয়রের | বৃহস্পতিবার , ২৩ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আইন অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাধারণ সভায় সিডিএ’র প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে হবে। তবে বর্তমান পর্ষদের সর্বশেষ পাঁচটি সাধারণ সভায় সিডিএ’র কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। এতে সংস্থাটির সঙ্গে উন্নয়ন কাজে সমন্বয় করতে পারছে না চসিক। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সাধারণ সভায় সিডিএ’র কোনো প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকলে তা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানাবে চসিক।

 

গতকাল অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের ২৬ তম সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি আসন্ন রমজান মাসে শহরকে যানজটমুক্ত রাখার ওপর জোর দেন। এলক্ষ্যে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও চসিকসহ অন্যান্য সেবা সংস্থার একযোগে কাজ করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন মেয়র।

এছাড়া সভায় নষ্ট সড়কবাতি সংস্কার, হকার কর্তৃক অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধে অভিযান, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো এবং মশক নিধন কার্যক্রম জোরালো করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বহদ্দারহাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ এবং ফ্লাইওভারের নিচে এবং অন্যান্য সড়কের উপযুক্ত স্থানে পেপার্কিং চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সিডিএ’র বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে চসিক : সভায় ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী অভিযোগ করে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও করে সংস্থাটি। এসব উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে চসিকের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত। কিন্তু সমন্বয়

ঠিকভাবে না হলে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যেমন খালের কাজ করার জন্য মুরাদপুরে বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে লোক পারাপারের জন্য ছোট্ট একটি ব্রিজ করা হয়েছে। যা অপর্যাপ্ত। এতো সরু ব্রিজটি যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার মুরাদপুরের ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ি খাড়াভাবে করা। সেখানে কাঁদায়

পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয়ে সিডিএ’র সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করা যায়। অথচ আজকের সাধারণ সভায় তাদের কোনো প্রতিনিধিই উপস্থিত নাই।

এ সময় আরো কয়েকজন কাউন্সিলরও সিডিএ’র প্রতিনিধি না থাকা নিয়ে সমালোচনা করেন। পরে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে সিডিএ প্রতিনিধি প্রেরণ না করলে প্রয়োজনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে তা জানানো হবে। কাউন্সিলর মোবারক আলী বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেন।

মেয়র সিডিএ’র উদ্দেশে বলেন, সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুরাদপুর রোড ও মূল সড়কের সংযোগ স্থলে রাস্তা কর্তনের ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ লাঘব করতে হবে।

মহেশখালের মুখে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী স্লুইচ গেট নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় জোয়ারের পানি না আপাতত অস্থায়ী স্লুইচ গেট এবং খালের উপর নির্মিত সেতুতে নিরাপত্তার স্বার্থে রেলিং স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বে খালের ভিতর দিয়ে পানি চলাচলের সুবিধার্থে খালের ভিতরে স্তুপীকৃত মাটিগুলো দ্রুত অপসারণ করতে হবে।

সড়ক বাতি নিয়ে ক্ষোভ : সভায় এক কাউন্সিলর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেকগুলো সড়কবাতি নষ্ট হয়ে আছে। বিদ্যুৎ বিভাগকে বার বার বলার পরও সমাধান হচ্ছে না। তখন মেয়র আগামী তিনদিনের মধ্যে শহরের নষ্ট সড়ক বাতিগুলো সংস্কারের নির্দেশনা দেন বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে। মেয়র বলেন, কাউন্সিলর এবং প্রকৌশলীরা সমন্বয় করে ওয়ার্ডের সড়কগুলোতে আলোকায়ন নিশ্চিত করবেন।

ব্যাটারি রিকশা বন্ধে উদ্যোগ : সভায় কাউন্সিলরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন। এর প্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, বর্তমানে ব্যাটারি রিকশা জনভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এ রিকশাগুলো বিপুল বিদ্যুৎ ব্যয় করছে। তবে কেবল ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করলে হবে না, এর বিকল্পও

আমাদের জনগণকে দিতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা সৌরবিদ্যুৎ চালিত রিকশা চালুর বিষয়ে অনেকটা এগিয়েছি। সৌর চালিত রিকশাগুলো বর্ষাকালে কিছুটা ধীরগতির হয়ে গেলেও সারা বছর বেশ ভালো সেবা দেয়। এ ধরনের বিকল্প হাজির না করে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করা কঠিন হয়ে যাবে।

মেয়র যা বললেন : সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রমজান মাসে জনভোগান্তি হ্রাসে যানজটমুক্ত সড়ক নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সেবা সংস্থার সাথে সমন্বয়ের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে মানুষ পরিবারের সাথে ইফতার করতে চায় আর ঈদের পোশাক

কিনতে স্বচ্ছন্দে চলতে চায়। এ জন্য রোজার মাস ও ঈদের সময় সড়কে যাতে যানজট না হয় সে বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সেবা সংস্থার একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, হকারদের অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। রোজায় বাজারগুলোর রাস্তা যাতে ব্যবহারযোগ্য থাকে এবং নালাগুলো যাতে পরিষ্কার থাকে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি নিউমার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে হকারদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ফুটপাত

দখল করে গড়ে উঠা দোকান উচ্ছেদ, বহদ্দারহাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ, ফ্লাইওভারের নিচে এবং অন্যান্য সড়কের উপযুক্ত স্থানে সড়কে পেপার্কি চালুকরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন।

সেবা সংস্থগুলোর মধ্যে কার্যক্রমের সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী চসিকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন।

এই প্রকল্পসহ চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে চট্টগ্রামের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। তবে, সেবা সংস্থাগুলো যদি চসিকের সাথে সমন্বয় না করলে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল হুমকির মুখে পড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআ. লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ২৭ নেতাকর্মী
পরবর্তী নিবন্ধমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট সূত্রনির্ভর : তথ্যমন্ত্রী