সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের পরও চাকরি স্থায়ীকরণে ‘অপারগতা’ প্রকাশ করায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলমের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছে সংস্থাটির অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। পরে মেয়রের আশ্বাসে সরে যান তারা। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেয়ায় অফিস ছুটির পরও দপ্তর থেকে বের হতে পারেননি প্রধান নির্বাহী। ফলে এক প্রকার অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদ আছে ৪ হাজার ২২৬টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে স্থায়ী আছেন ২ হাজার ৭৭০ জন। অর্থাৎ অস্থায়ী আছেন ৬ হাজার ৩৩ জন। অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে বর্তমানে শূন্য পদ আছে এক হাজার ৪৫৭টি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর অস্থায়ীদের স্থায়ী করার উদ্যোগ নেয় চসিক। এর অংশ হিসেবে গঠিত একটি কমিটি ‘মানবিক ও সামাজিক’ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্থায়ী করতে তিন দফা সুপারিশ করে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায়ও স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপরও অপারগতা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাহী। এর প্রতিবাদে অস্থায়ীরা গতকাল টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রধান নির্বাহীর দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণের দাবি জানান। অস্থায়ী শ্রমিক–কর্মচারীরা প্রায় ২০মিনিট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে শ্রমিক নেতারা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি তুলে ধরেন। সিটি করপোরেশনের শূন্য পদের বিপরীতে অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী করার প্রক্রিয়া শুরু করার অনুরোধ জানান। তখন তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে নানা স্লোগান দেন। কেউ কেউ উচ্ছৃঙ্খল আচরণও করেন।
জাতীয় শ্রমিক–কর্মচারী লীগের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সভাপতি ফরিদ আহমদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, সাধারণ সভায় অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিন দিনেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেননি। আমর দেখা করে অনুরোধ করেছি। তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। এ জন্য শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে অবস্থান নিয়েছে। স্লোগান দিয়েছে কেউ কেউ। তিনি বলেন, আমরা মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেছি। মেয়র চাকরি স্থায়ী করার প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমকে গত ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য হিসেবে বদলির আদেশ হয়েছে। তবে এখনো নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি তিনি।
জানা গেছে, অস্থায়ীদের মধ্যে অনেকে গত ২০–২৫ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত আছেন। কারো অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু এদের স্থায়ী না করে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ পদে ৬০ জন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তখন স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের দাবিতে আন্দোলন করেন অস্থায়ীরা। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে চসিক।
জানা গেছে, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পৌনে চার ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। ওই সময় মেয়র স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। পরে ৫ ডিসেম্বর সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি প্রদান, ৮ ডিসেম্বর নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন করা হয়। সর্বশেষ ১১ অক্টোবর অবস্থান কর্মসূচি করার কথা ছিল। তবে চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে কর্মসূচি পালন করেননি অস্থায়ীরা।
সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চসিকের অস্থায়ীদের বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তাদেরকে আইন–কানুনের আওতায় এনে সুযোগ দিয়ে রেগুলাইজ (নিয়মিত) করার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি বৈঠক হয়। এতে অস্থায়ীদের স্থায়ী বা নিয়মিত করণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২৬ মে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়।