‘এটা আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি’

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়ানো কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ক্লাব কলেজিয়েট চিটাগং লিমিটেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনের ষষ্ঠ তলায় সংগঠনের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ক্লাবের কার্যক্রম ধারাবাহিক রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলা হয়, ‘এটাই হবে আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি।’ চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী কুরআন থেকে তেলাওয়াত করার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্কুলটির প্রাক্তন ছাত্র, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই কলিজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া করেছি। আমরা এখানে সবাই এক্সফর্মার। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা সবাই মিলে একটা ক্লাব করেছি। এখানে সবার মিলনমেলা হবে। সবাই আমরা এখানে একত্রিত হবো। যারা এই ক্লাব গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, সবাইকে আমি সাধুবাদ জানাই। এটার উন্নতির জন্য সবসময় আমি আপনাদের পাশে থাকবো।’

ক্লাব কলেজিয়েটের সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক এম এ মালেক বলেন, ‘ক্লাবের সদস্যদের বলবো, অন্য কাজ থেকে আসলেও মনে করতে হবে যে এটা আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি। সেভাবে যদি মনে করা যায়, তাহলে ক্লাবটার কার্যক্রম ধারাবাহিক রাখা যাবে।’

এ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিলেত গেছিলাম তখন বিবিসি আমার ইন্টারভিউ নেয়। সেদিন আমি বলেছিলাম, ‘আমি আমার স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলেছি।’ কারণ আমার বাবা যখন মারা যান তখন আমার পত্রিকার বয়স মাত্র ২ বছর। তিনি চেয়েছিলেন আমি কাজটা চালিয়ে যাই। তারপর আমার বাবা মারা যাবার পর আমার জীবনের ৪৮ বছর আমি হকারদেরকে নিজ হাতে কাগজ দিয়েছি। আমি মনে করি আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি। আমার বাবা কাউকে ক্ষুদ্র ঋণ দেননি। তিনি তাদের ক্যাপিটাল দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে তাদের ব্যবসার লভ্যাংশ দিয়ে হজ্জ্ব করেছেন। আমাকে একুশে পদকের সম্মান প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আমি বলবো, জীবনে কোনো পুরস্কারের আশা করা যাবে না। যে কাজে আছেন সে কাজটা নিরলসভাবে করে যেতে হবে। তারপর পুরস্কার আপনার পিছনে আসবে। জীবনকে উপভোগ করতে হবে। আপনি প্রথমে নিজেকে ঠিক করতে হবে, তারপর অন্যকে ঠিক করতে পারবেন। যেমন আমরা মুসলমানরা যদি ঠিক মতো যাকাতটা দেই তাহলে বাংলাদেশে কোনো গরীব থাকবে না।’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাব কলেজিয়েটের ভাইস চেয়ারম্যান রুশো মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘পারস্পরিক যোগাযোগের সেতু বন্ধন তৈরি করার জন্য আমাদের এই ক্লাব। এই ক্লাব গতানুগতিক ক্লাব কালচারে গা ভাসাবে না। আমাদের এখানে এলে ভিন্ন কিছু পাবেন। যে সকল গুণীজনেরা উপস্থিত আছেন সবার প্রতি পরম শ্রদ্ধা। এই গুণীজনদের সান্নিধ্য আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা করছি।’

ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক মোহীত উল আলম বলেন, ‘যারা কলিজিয়েট স্কুল হতে এসএসসি পাশ করেছে; যাদের বয়স ৩৫ হয়নি তারা সদস্য হতে পারবেন না। এ নিয়ে অনেকে মতানৈক্য ছিলো। এখন ২০০১ ব্যাচও যুক্ত হচ্ছে। আমাদের ক্লাব প্রলম্বিত অধ্যায় রয়েছে। আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। কলেজিয়েট স্কুল আমাদের উদারতা শিখিয়েছে। এই উদারতা, মানবতা, দেশপ্রেম এগুলোই মূলত মানুষ হিসেবে আমাদের অর্জন। ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সবার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। সবাই চেয়েছে আমরা একত্রিত হই। হয়তো অনেক বিপরীত মতামত থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কলেজিয়েট স্কুল একটা স্বপ্ন দেখিয়েছে, সেটা বাস্তবায়নে আমাদের একত্রিত হতে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছি। অনেক সময় মনে করা হয় যে আবেগের কোনো স্থান নেই। কিন্তু আবেগ ছাড়া বাংলাদেশ গড়তে পারবেন না।’

ক্লাবটির উদ্বোধক ছিলেন প্রকৌশলী ইব্রাহিম খান। তিনি বলেন, ‘কলেজিয়েটের ছাত্রদের প্রত্যেক দিন মিলনমেলা করার জন্য এটি একটি সুন্দর প্লাটফর্ম। আগে যেটা ছিলো সেটার কর্মকাণ্ড হতো বছরে একবার। এখন আর সেটি হবে না। সারাবছরই আপনারা সবাই মিলে ক্লাবটিকে সক্রিয় রাখবেন, প্রাণবন্ত রাখবেন।’ এর পর তিনি ক্লাব কলেজিয়েট হাউজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৪ বছরের মেয়েকে বিয়ে দেয়ায় মায়ের কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের প্রধান নির্বাহীকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ