চসিকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে বুধবার। তাঁর প্রতিশ্রুতির কতটুকু পূরণ হলোতা নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকাল দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে,

মেয়র পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা। অনুমোদন মিলেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের। বেড়েছে রাজস্ব আদায়। থোক বরাদ্দ দিয়েছে মন্ত্রণালয়ও। এরপরও মশক নিধন, জলাবদ্ধতা, পরিচ্ছন্নতা এবং আলোকায়নসহ সেবা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্টি ও অভিযোগ আছে নগরবাসীর। গৃহকর ইস্যুতেও অভিযোগের শেষ নেই। এমনকি সর্বশেষ পারফরমেন্স মূল্যায়ন প্রতিবেদনে (এপিএ রিপোর্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চসিকের অবস্থান হয়েছে ১৮তম। সর্বশেষ মশার ওষুধ কেনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে ‘অনিয়ম’এর সত্যতা পাওয়া এবং প্রকল্প পরিচালককে ঠিকাদারের মারধরের ঘটনায় চসিকের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও সংকটে পড়েছে।

প্রতিবেদনে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর সীমাবদ্ধতা ও আক্ষেপের কথাও উঠে এসেছে এতে। সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের সময় সিটি কর্পোরেশনের ১১শ কোটি টাকা দেনা ছিল। সেখান থেকে ঠিকাদারদের বকেয়া ২০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি, যার সবগুলোই কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় থেকে করা হয়েছে। ৮৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকার বিজ্ঞাপন বাবদ নয় কোটি টাকা বকেয়া ছিল। এর মধ্যে সাত কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। এ রকম প্রতিটি সেক্টরেই বকেয়া ছিল, যা গত দুই বছরে পরিশোধ করেছি। যদি এসব বকেয়া পরিশোধ করতে না হতো তাহলে ওই টাকা আমি নগর উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারতাম।

তিনি বলেন, আমার মেয়াদকালে এক টাকাও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া নেই। প্রতি মাসে দুইআড়াই কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। প্রতি মাসে ২৩২৪ কোটি টাকা বেতন আসে কর্মকর্তাকর্মচারীর। সেগুলোও ১ তারিখ পরিশোধ করে দিই। আগে তো ১০ তারিখ হয়ে যেত। আর্থিক সংকটের মধ্যেও ঠিকাদারদের ২০০ কোটি টাকা পরিশোধ করে তাদের চোখের পানি বন্ধ করা কিন্তু সোজা ব্যাপার না।

এ কথা সত্যি যে, ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রাম ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নগরী। এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অনেক অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। এই নগরীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন সত্যিকার অর্থে নানান আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে উন্নীত করার মতো দায়িত্ব পালনে সফল হতে পারছে না। তবে এটাও সত্য যে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগসুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে।

জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানিরফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিশাল উৎস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে নাগরিকেরা কী চায়। তারা চায় এই নগর যেন পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকে, রাস্তার বাতি যেন ঠিকমতো জ্বলে, ফুটপাতে যেন চলাচল করতে অসুবিধা না হয় ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের অভিজাত সুন্দর শহর যেমন সিউল, ক্যানবেরা, সিঙ্গাপুর, নিউইয়র্ক, মস্কো, টোকিওএসব শহরে গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ। কিন্তু আমাদের নগরীতে সেই তুলনায় অনেক বেশি মানুষ বাস করছে। তাই একটু বেশি চাপ এসে পড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওপর।

আমরা আজাদীর প্রতিবেদনে দেখতে পাই, বেশ কিছু স্বপ্ন ও পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন সিটি মেয়র। যে কোনো উপায়ে নগর ভবন করার পরিকল্পনা আছে তাঁর। বিভিন্ন ওয়ার্ডে পার্ক করতে চান। বাটালি হিলে ‘চট্টগ্রাম টাওয়ার’ করার চিন্তা আছে। শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে চান। আরো অনেক কিছু। আমরা চাই, তাঁর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটুক। গৃহকর নিয়ে নাগরিকদের মনের অস্বস্তি দূর হোক। নগরবাসী পাক একটি সুন্দর আধুনিক নগরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে