চশমা খালে এবার শিশু নিখোঁজ

নেমেছিল বোতল কুড়াতে, খেলনা দেখে সাঁতরে যায়

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

তিন মাস ১২ দিন আগে চশমা খালে পড়ে নিখোঁজ হন এক সবজি বিক্রেতা। তার হারিয়ে যাওয়া এবং সন্ধান না পাওয়া-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। এই অবস্থায় গত সোমবার সেই চশমা খালেই বোতল কুড়ানোর সময় নিখোঁজ হয় ১৪ বছরের শিশু মো. কামাল উদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তার খোঁজ মিলেনি। তবে কি কামালের পরিণতি সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদের মতো হবে?
নিখোঁজ কামাল নগরের কোতোয়ালী থানার আন্দরকিল্লা মাছুয়াঝরনা এলাকার আলী কাউসারের ছেলে। বাবা-ছেলে ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় থাকত। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে কামাল সবার ছোট। তার অন্য সন্তানরা ঢাকায় থাকে বলে জানান কাউসার আলী। কামালের মা নেই। কাউসার আলী দিনমজুর। কামালও বোতলসহ অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য কুড়িয়ে বিক্রি করত।
কামালের বাবার সঙ্গে কথা বলে এবং স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকালে বন্ধু রাকিবকে নিয়ে ষোলশহর ভূমি অফিস সংলগ্ন চশমা খালে বোতল কুড়াতে নামে কামাল। সেখানে একটা খেলনা দেখতে পেয়ে তারা সাঁতার কাটে। সামান্য আসার পর স্রোতের মুখোমুখি হয় তারা। এ সময় রাকিব নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও কামাল হারিয়ে যায়। ভয়ে এ ঘটনা সাথে সাথে কাউকে জানায়নি রাকিব। সন্ধ্যার দিকে কামালের বাবাকে জানায়। তিনি এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান পাননি। মাঝখানে টহল পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও না পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

কামাল নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর গতকাল দুপুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোডেকের এক কর্মী জানতে পেরে স্থানীয় এক সাংবাদিকের সহযোগিতায় খবর দেন ফায়ার সার্ভিসে। পরে বিকাল ৪টার পর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এতে সরঞ্জাম ও জনবল দিয়ে সহয়োগিতা করে সিটি কর্পোরেশন। সর্বশেষ গত রাত সাড়ে ১০টায় তারা উদ্ধার কাজ শেষ করে। আজ বুধবার ভোর থেকে আবারও উদ্ধার কাজ শুরুর কথা রয়েছে।
গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের চলমান কাজের সুবিধার্থে ষোলশহর ভূমি অফিসের সামনে খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। পানি চলাচলের জন্য সড়কের নিচ দিয়ে গৌরাঙ্গ বাড়ির দিকে যাওয়া নালায় খালটি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বাঁধ এলাকায় আবর্জনার স্তূপ জমেছিল। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার তৎপরতা দেখতে ভিড় করেন উৎসুক লোকজন। এ সময় ‘আমার ছেলেকে কই পাব’ বলে বিলাপ করছিলেন কামালের বাবা।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ আজাদীকে বলেন, বিকালে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। রেসকিউ ও ডুবুরিসহ তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজ চালিয়েছি। রাত সাড়ে ১০টায় উদ্ধার কাজ শেষ করার সময় পর্যন্ত নিখোঁজ কামালের সন্ধান পাইনি।
তিনি বলেন, আমরা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছি। এরপরও পেলাম না কেন বুঝতে পারছি না। খালে থাকা ময়লা আবর্জনার জন্য উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন আমাদের সহযোগিতা করেছে। তাদের স্কেভেটর দিয়ে ময়লা অপসারণ করেছে। ওখানে একটি বাঁধ আছে। তাই কামালের অন্যত্র চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে মূল শপিং কমপ্লেঙের সামনে রাস্তার উপর একটি ক্রস ড্রেন আছে। ওই ড্রেনে প্রচুর ময়লা। সেখানে বেশি সন্ধান করা সম্ভব হয়নি। কাল (আজ) অভিযানে ওই ক্রস ড্রেনে বেশি গুরুত্ব দেব।
সিটি কর্পোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমাদের স্কেভেটরের পাশাপাশি ১২ জন কর্মী ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধার কাজ চালিয়েছে। সেখানে ময়লা-আবর্জনা একেবারে পরিষ্কার করে ফেলেছি। দুই ট্রাক ময়লা পরিষ্কার করেছি।
বাকরুদ্ধ কামালের বাবা কাউসার বলেন, সোমবার রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আমার ছেলেকে পাইনি।
কামালের বন্ধু রাকিব জানায়, খেলনা দেখে সাঁতার কাটি। সামান্য আসার পর স্রোতে পড়ি। আমি আসতে পারলেও কামাল উঠতে পারেনি।
খালটির পাশে একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মী পরিচয় দেয়া আকতার হোসাইন বলেন, সোমবার দুজনকে খালে সাঁতার কাটতে দেখেছি। আজকে (গতকাল) লোকজন জড়ো হওয়ার পর একজনের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানতে পারি।
বেসরকারি সংস্থা কোডেকের কর্মী মোহন আজাদীকে বলেন, রাকিব ভয়ে সাথে সাথে ঘটনা কাউকে জানায়নি। জানালে হয়ত উদ্ধার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা যেত।
প্রসঙ্গত, সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ নিখোঁজ হন চশমা খালের মুরাদপুর অংশে। এর আগে ৩০ জুন একই খালের মেয়র গলি এলাকায় পড়ে যায় একটি সিএনজি টেঙি। এতে টেঙি চালক ও এক যাত্রী মারা যান। ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহেরিন মাহবুব সাদিয়া। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় সাদিয়ার মরদেহ।
চসিক ও সিডিএর অবহেলার কারণেই মুরাদপুরে নালায় পড়ে সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ এবং আগ্রাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিয়ার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে সিডিএ চেয়ারম্যান ও চসিকের প্রধান নির্বাহীসহ ১৩ জনকে গত ১৮ অক্টোবর লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিল চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (সিসিবি ফাউন্ডেশন) পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম ও আইনজীবী ইশরাত হাসান। এছাড়া নগরে খাল ও নালায় পড়ে প্রাণহানির জন্য চসিক ও সিডিএকে দায়ী করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিখোঁজের একদিন পর উদ্ধার অভিযান যে কারণে
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬