অবশেষে এক মাস দশ দিন পর সচল হল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডের রেডিওথেরাপি মেশিন। যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর পর গতকাল সোমবার মেশিনটি সচল হয়েছে। চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর রেডিওথেরাপি মেশিন সচলের এ তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা থেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে গতকাল সোমবার মেশিনটির যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করেছেন বলেও জানান তিনি। যান্ত্রিক ত্রুটিতে গত ২৬ জুলাই থেকে মেশিনটি অচল হয়ে পড়ে। মেশিনের সাথে সংযুক্ত টেবিলের একটি পার্টস নষ্ট হওয়ায় টেবিলটি কাজ করছিলনা। এখন মেশিন সচল হওয়ায় চট্টগ্রামের ক্যান্সার রোগীরা আজ মঙ্গলবার বা কাল বুধবার থেকে ফের রেডিওথেরাপি সেবা পাবেন বলে জানিয়েছেন রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফ।
প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা মূল্যের এ মেশিন অচল থাকায় বন্ধ হয়ে যায় রেডিওথেরাপি সেবা। এতে করে অসহায় হয়ে পড়েন বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক ক্যান্সার রোগী। একমাত্র চমেক হাসপাতাল ছাড়া সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামের আর কোন প্রতিষ্ঠানে এই (রেডিওথেরাপি) সেবা চালু নেই। ফলে জরুরি ভিত্তিতে রেডিওথেরাপি সেবা দরকার, এমন রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বেশি। চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডে দৈনিক কম হলেও দেড় শতাধিক রোগী সেবা পান। তবে মেশিন অচল হয়ে পড়ায় গত ২৬ জুলাই থেকে এর সেবা বঞ্চিত চট্টগ্রামের ক্যান্সার রোগীরা।
এ নিয়ে গত ১০ আগস্ট দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘চমেক হাসপাতাল : যান্ত্রিক ক্রটিতে অচল সাড়ে দশ কোটি টাকার মেশিন/বন্ধ রেডিওথেরাপি সেবা, অসহায় ক্যান্সার রোগীরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, যান্ত্রিক ক্রুটি সারাতে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। আর মেশিন চালুর দুই বছর পার হলেও দীর্ঘ দিন বিল আটকে থাকার কথা জানায় মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে মেশিন সরবরাহকারী জার্মান প্রতিষ্ঠান বিআইবিআইজি’র বাংলাদেশি এজেন্সি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি ইন্টারন্যাশনালের এমডি মোহাম্মদ জামান ওই সময় আজাদীকে বলেন, ২০১৮ সালের শেষ দিকে মেশিনটি চালু হলেও এখনো পর্যন্ত এর শতভাগ বিল আমরা পাইনি। ৩০ শতাংশ বিল (৩ কোটি টাকার কম নয়) এখনো আটকে আছে। এতদিন ধরে বিল আটকে থাকলে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সার্ভিস দেয়া কিভাবে সম্ভব, সে প্রশ্ন রাখেন মোহাম্মদ জামান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিল আটকে থাকার কথা স্বীকার করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মেশিন বুঝিয়ে দেয়ার পর সার্ভে কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিল পাশ হয়। ওই সার্ভে কমিটিতে সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় ওষুধাগার) এবং নিমিইউ (ন্যাশনাল ইলেকট্রো- মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার)’র একজন করে প্রতিনিধি থাকার নিয়ম। আমরা ওই সময়ে সিএমএসডির কাছে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানাই।
যান্ত্রিক বিষয়টি বুঝতে সক্ষম এমন একজন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বেশ কয়েকবার সিএমএসডিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার না পাঠানোয় সার্ভে কমিটির প্রতিবেদন আটকে রয়েছে। আর সার্ভে কমিটির প্রতিবেদন আটকে থাকার কারণে মেশিন সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের বাকি বিলটাও আটকে ছিল।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডটি চট্টগ্রামসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের ক্যান্সারের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল। ক্যান্সারের চিকিৎসায় চট্টগ্রামে দ্বিতীয় কোন প্রতিষ্ঠানে রেডিওথেরাপি মেশিন চালু নেই বলে জানান চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের (ক্যান্সার ওয়ার্ড) প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফ ও সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী আসগর চৌধুরী।